বেদান্ত
বেদান্ত শব্দের অর্থ কি? বেদান্ত দর্শন কাকে বলে?
বেদান্ত শব্দের অর্থ বেদের অন্ত বা শেষ ভাগ।
বেদান্ত দর্শন হিন্দু দর্শনের একটি আস্তিক শাখা। বেদান্ত দর্শনের মূল ভিত্তি উপনিষদ। বেদান্ত দর্শনে বৈদিক যজ্ঞ ও ক্রিয়াকর্মর বদলে ধ্যান, আত্মনিয়ন্ত্রয়ন ও আধ্যাত্মিকতার প্রতি অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এই শাখার প্রধান উপশাখা গুলি- অদ্বৈত বেদান্ত, বৈশিষ্ট্যাদ্বৈত, দ্বৈত। এদের মধ্যে অদ্বৈত বেদান্ত প্রধান।
অদ্বৈত বেদান্ত কি?
অদ্বৈত বেদান্ত হল বৈদিক দর্শনের সর্বেশ্বরবাদী। সর্বেশ্বরবাদীর মতে মানুষের সত্যিকারের সত্ত্বা আত্মা হল শুদ্ধ চৈতন্য এবং পরম সত্য ব্রহ্মও শুদ্ধ চৈতন্য।
কতক মানুষ মনে করে, বেদান্ত পুরোপুরিই একটি তাত্ত্বিক শাস্ত্র, কল্পনাভিত্তিক ও বাস্তব জীবনে ব্যবহারযোগ্য নয়। এধরনের চিন্তা-ভাবনা সত্যের বিপরীত। জগতে যতরকম ‘দর্শন’ আছে, তার মধ্যে বেদান্তই সবচেয়ে বেশী ব্যবহারযোগ্য। অধ্যাপক ম্যাক্সমূলার যথার্থই বলেছেন,—‘বেদান্তই দর্শনশাস্ত্রগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশী মহত্ত্বপূর্ণ ও ধর্মসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশী সান্ত্বনাদায়ক।
ভারতে দর্শনকে ধর্মের তাত্ত্বিক দিক ও ধর্মকে দর্শনের ব্যবহারিক দিক ব’লে সব সময়েই মনে করা হয়েছে। জ্ঞান-বৃক্ষের ফুল হ’ল দর্শন আর ফল হ’ল ধর্ম। একথা মনে রাখলে আমরা বুঝতে পারব বেদান্ত ব্যবহারযোগ্য কিনা।
‘বেদান্ত’ শব্দটার মানে কি, তা বুঝবার জন্য চেষ্টা করা যাক। ‘বেদান্ত’ শব্দটার অর্থ বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই যে, এ একটি মিশ্র শব্দ যা ‘বেদ’ ও ‘অন্ত’—এই দুটি শব্দ দ্বারা গঠিত। ‘বেদ’ শব্দটা সংস্কৃত ‘বিদ্-ধাতু হ’তে এসেছে, যার মানে হ’ল জানা। তাই ‘বেদ’ শব্দের অর্থ হ’ল জ্ঞান বা বিজ্ঞতা। ‘অন্ত’-শব্দ ও ইংরেজী ‘এন্ড’(end)-শব্দ একই। অতএব বেদান্ত শব্দের অর্থ হ’ল জ্ঞানের শেষ।
কিন্তু কোথায় সেই শেষ এবং তা কি ধরনের শেষ—এটাই হ’ল পরবর্তী প্রশ্ন, যার উত্তর আমাদের জানতে হবে। কোথায় আমরা জ্ঞানের শেষ বা অন্ত পাব? জগতের সব বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্র প্রকৃতির অন্তর্নিহিত সত্যসমূহ উদ্ঘাটন করতে ও বাস্তবক্ষেত্রে সে সত্যগুলি যেমনভাবে আছে, তা জানতে চেষ্টা করছে। জ্ঞানের অন্ত হবে সেখানেই আর কোন আপেক্ষিকতা থাকবে না—সেখানে স্থান, কাল ও কার্যকারণের আর কোন সম্পর্ক থাকবে না। জ্ঞানের শেষ সীমিত-জ্ঞান বা দৃশ্যমান জগতের একটা বিশেষ অংশের জ্ঞান হ’তে পারে না; কিন্তু জ্ঞানের এই শেষস্থল অবশ্যই হবে সার্বিক অস্তিত্বের বা পরমপুরুষের জ্ঞান। এই পরমপুরুষই হলেন সীমাহীন জ্ঞান-সমুদ্র। এই হ’ল সমস্ত ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুর উৎপত্তিস্থল। এটাই হ’ল আমাদের জীবনের ভিত্তিমূল ও আমাদের পার্থিব অস্তিত্বের সত্যিকারের ভিত্তিভূমি। প্রাকৃত জগতের সেই উৎসস্থলও হ’ল আবার জ্ঞানের শেষ পরিণতি।
ঈশ্বরত্ব হ’ল সমস্ত জ্ঞানের শেষ সীমা। দিব্যজ্ঞান হ’তে শ্রেষ্ঠতর আর কি হ’তে পারে—উচ্চতর, মহত্তর এবং অধিকতর সত্য? সেই দিব্যজ্ঞানই হ’ল শেষ লক্ষ্যস্থল। আমাদের সেই লক্ষ্যস্থলে পৌঁছাতে হবে—শীঘ্রই হোক আর বিলম্বেই হোক। সব দার্শনিকই সেই গন্তব্যস্থল আবিষ্কার করতে চেষ্টা ক’রে যাচ্ছেন; যদিও তাঁরা একে ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়েছেন। প্লেটো একে বলেন ‘গুড্’; স্পিনোজা বলেন ‘সাবস্টান্সিয়া’; ক্যান্ট বলেন ‘ট্রান্সেণ্ডেটাল থিঙ্গ-ইন্-ইটসেল্ফ’; এমার্সন নাম দিয়েছেন ‘ওভারসোল’, কেউ বা বলেন ‘নৌমেনন’; অন্যেরা বলেন ‘ব্রহ্মন্, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, স্বর্গীয় পিতা, আল্লাহ্, আহুর মাজদা, আরও কত নাম। জ্ঞানসমুদ্র একই, যদিও নানা নামে অভিহিত হয়। আমরা এর পূর্ণসত্তা দর্শন করতে ও অনুভব করতে পারি না বটে, কিন্তু আমরা একে জীবনের কোন কোন মুহূর্তে ক্ষণিক দৃষ্টিগোচরে পেতে পারি। যদি আমরা স্বীয় অস্তিত্ব উপলব্ধি করতে চেষ্টা করি, স্বরূপতঃ আমরা কি—যদি আমরা তা অনুভব করতে চাই, তবে আমাদের অন্তর-গভীরে আবিষ্কার করতে হবে একটা স্ফুলিঙ্গ, যা হ’ল প্রচ্ছন্ন ঈশ্বরত্ব। এটি নিঃসৃত হয়েছে সেই শাশ্বত বুদ্ধি ও জ্ঞানসূর্য হ’তে। এ হ’ল সেই পরমসত্তার সীমাহীন সমুদ্রের ওপর ভাসমান একটা বুদ্বুদকণার মতন। এই যে ইন্দ্রিয়গোচর বস্তুনিচয় যা আমরা ইন্দ্রিয় দ্বারা অবগত হই, তা সবই শুধু সেই ঐশ্বরিক শক্তি বা দিব্য ইচ্ছাশক্তির অভিব্যক্তি, যা হ’ল সব প্রাকৃতিক শক্তির উৎস।
ভারতে দর্শনকে ধর্মের তাত্ত্বিক দিক ও ধর্মকে দর্শনের ব্যবহারিক দিক ব’লে সব সময়েই মনে করা হয়েছে। জ্ঞান-বৃক্ষের ফুল হ’ল দর্শন আর ফল হ’ল ধর্ম। একথা মনে রাখলে আমরা বুঝতে পারব বেদান্ত ব্যবহারযোগ্য কিনা।
‘বেদান্ত’ শব্দটার মানে কি, তা বুঝবার জন্য চেষ্টা করা যাক। ‘বেদান্ত’ শব্দটার অর্থ বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই যে, এ একটি মিশ্র শব্দ যা ‘বেদ’ ও ‘অন্ত’—এই দুটি শব্দ দ্বারা গঠিত। ‘বেদ’ শব্দটা সংস্কৃত ‘বিদ্-ধাতু হ’তে এসেছে, যার মানে হ’ল জানা। তাই ‘বেদ’ শব্দের অর্থ হ’ল জ্ঞান বা বিজ্ঞতা। ‘অন্ত’-শব্দ ও ইংরেজী ‘এন্ড’(end)-শব্দ একই। অতএব বেদান্ত শব্দের অর্থ হ’ল জ্ঞানের শেষ।
কিন্তু কোথায় সেই শেষ এবং তা কি ধরনের শেষ—এটাই হ’ল পরবর্তী প্রশ্ন, যার উত্তর আমাদের জানতে হবে। কোথায় আমরা জ্ঞানের শেষ বা অন্ত পাব? জগতের সব বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্র প্রকৃতির অন্তর্নিহিত সত্যসমূহ উদ্ঘাটন করতে ও বাস্তবক্ষেত্রে সে সত্যগুলি যেমনভাবে আছে, তা জানতে চেষ্টা করছে। জ্ঞানের অন্ত হবে সেখানেই আর কোন আপেক্ষিকতা থাকবে না—সেখানে স্থান, কাল ও কার্যকারণের আর কোন সম্পর্ক থাকবে না। জ্ঞানের শেষ সীমিত-জ্ঞান বা দৃশ্যমান জগতের একটা বিশেষ অংশের জ্ঞান হ’তে পারে না; কিন্তু জ্ঞানের এই শেষস্থল অবশ্যই হবে সার্বিক অস্তিত্বের বা পরমপুরুষের জ্ঞান। এই পরমপুরুষই হলেন সীমাহীন জ্ঞান-সমুদ্র। এই হ’ল সমস্ত ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুর উৎপত্তিস্থল। এটাই হ’ল আমাদের জীবনের ভিত্তিমূল ও আমাদের পার্থিব অস্তিত্বের সত্যিকারের ভিত্তিভূমি। প্রাকৃত জগতের সেই উৎসস্থলও হ’ল আবার জ্ঞানের শেষ পরিণতি।
ঈশ্বরত্ব হ’ল সমস্ত জ্ঞানের শেষ সীমা। দিব্যজ্ঞান হ’তে শ্রেষ্ঠতর আর কি হ’তে পারে—উচ্চতর, মহত্তর এবং অধিকতর সত্য? সেই দিব্যজ্ঞানই হ’ল শেষ লক্ষ্যস্থল। আমাদের সেই লক্ষ্যস্থলে পৌঁছাতে হবে—শীঘ্রই হোক আর বিলম্বেই হোক। সব দার্শনিকই সেই গন্তব্যস্থল আবিষ্কার করতে চেষ্টা ক’রে যাচ্ছেন; যদিও তাঁরা একে ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়েছেন। প্লেটো একে বলেন ‘গুড্’; স্পিনোজা বলেন ‘সাবস্টান্সিয়া’; ক্যান্ট বলেন ‘ট্রান্সেণ্ডেটাল থিঙ্গ-ইন্-ইটসেল্ফ’; এমার্সন নাম দিয়েছেন ‘ওভারসোল’, কেউ বা বলেন ‘নৌমেনন’; অন্যেরা বলেন ‘ব্রহ্মন্, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, স্বর্গীয় পিতা, আল্লাহ্, আহুর মাজদা, আরও কত নাম। জ্ঞানসমুদ্র একই, যদিও নানা নামে অভিহিত হয়। আমরা এর পূর্ণসত্তা দর্শন করতে ও অনুভব করতে পারি না বটে, কিন্তু আমরা একে জীবনের কোন কোন মুহূর্তে ক্ষণিক দৃষ্টিগোচরে পেতে পারি। যদি আমরা স্বীয় অস্তিত্ব উপলব্ধি করতে চেষ্টা করি, স্বরূপতঃ আমরা কি—যদি আমরা তা অনুভব করতে চাই, তবে আমাদের অন্তর-গভীরে আবিষ্কার করতে হবে একটা স্ফুলিঙ্গ, যা হ’ল প্রচ্ছন্ন ঈশ্বরত্ব। এটি নিঃসৃত হয়েছে সেই শাশ্বত বুদ্ধি ও জ্ঞানসূর্য হ’তে। এ হ’ল সেই পরমসত্তার সীমাহীন সমুদ্রের ওপর ভাসমান একটা বুদ্বুদকণার মতন। এই যে ইন্দ্রিয়গোচর বস্তুনিচয় যা আমরা ইন্দ্রিয় দ্বারা অবগত হই, তা সবই শুধু সেই ঐশ্বরিক শক্তি বা দিব্য ইচ্ছাশক্তির অভিব্যক্তি, যা হ’ল সব প্রাকৃতিক শক্তির উৎস।
- অবশ্যই পড়ুন - ঈশ্বরই সত্য - সত্যই ঈশ্বর
ঈশ্বর
বেদান্তের তিনটি চিন্তাপদ্ধতি আছে। প্রথমতঃ আমরা তিনটি পদ্ধতিই উল্লেখ করব। তারপর তাদের মধ্যে সামঞ্জস্য আমরা দেখাব। প্রথমেই দ্বৈত পদ্ধতির আলোচনা করা যাক। যতদিন আমরা নিজেদের শরীর ব’লে চিন্তা করি, যতদিন আমরা বর্হিজগৎ বা ইদ্রিয়গ্রাহ্য জগৎ সম্বন্ধে সচেতন আছি, ততদিন পর্যন্ত আমরা মনে করি যে একজন সৃষ্টিকর্তা বা শাসনকর্তা আছেন, এবং সেই শাসনকর্তাই হলেন ঈশ্বর। প্রথমে আমরা তাঁকে বিশ্বাতীত ব’লে মনে করি, যিনি আকাশে দূরে মেঘেরও ঊর্ধ্বে কোন স্থানে বসে আছেন, যার কাছে আমরা পৌঁছাতে পারি না। তিনি আমাদের মনেরও নাগালের বাইরে। ইহুদী ধর্মমতে আমরা এই স্তরের কথা পাই। দ্বৈতবাদীরা বিশ্বাস করে যে ঈশ্বরকে জানা যায় না, তাঁকে উপলব্ধি করা যায় না, আমাদের থেকে তিনি বহুদূরে অবস্থান করছেন; তিনি এত মহিমময় বা গৌরবোজ্জ্বল যে তাঁর কাছে যাওয়া সম্ভবপর নয়। ইসলামধর্মেও এই ভাব বিকশিত হয়েছে। একে আমরা অবশ্যই প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে মনে করব তাঁকে উপলব্ধি করার জন্য, যিনি হলেন সেই অসীম সত্তা—সেই সীমাহীন জ্ঞানসমুদ্র, যা হ’ল ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিশ্বজগতের ভিত্তিমূল। এই স্তরে ঈশ্বরকে বোধ হয় যে তিনি বিশ্বাতীত, তিনি প্রকৃতি-জগতের বহির্দেশে বিরাজমান। তারপর ক্রমে ঈশ্বরত্বের যথার্থ-স্বরূপ কি ও ঈশ্বরত্বের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কি, তা যতই আমরা উপলব্ধি করতে থাকি ততই আমরা কি দেখতে পাই? আমরা দেখতে পাই যে তিনি আমাদের নিকট হ’তে বহু দূরে বিরাজমান নন; তিনি এখানে, সেখানে, সর্বত্র রয়েছেন; তিনি আমাদের ভিতরেই আছেন; তিনি বিশ্বব্যাপী। বাস্তবিকপক্ষে তিনি প্রকৃতির ভিতর অনুপ্রবিষ্ট ও বিরাজমান। তিনি বিশ্বলীন। তিনি বাইরে থেকে শাসন করেন না, ভিতরে থেকেই শাসন করেন। আত্মা যেমন দেহের শাসনকর্তা ও সঙ্গে সঙ্গে দেহকে শাসন করে, তেমনি বিশ্বের প্রভু এই প্রাকৃতিক জগতে প্রবেশ করেছেন ও এর প্রতিটি অণু-পরমাণুকে নিয়ন্ত্রিত করছেন আর তিনি ভিতর থেকেই নিয়ন্ত্রণ করছেন, বাইরে থেকে নয়। সমস্ত ব্যষ্টি-আত্মাই হ’ল সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের অংশ—চেতন, অচেতন ও ঈশ্বর। একদিকে চেতন ও অচেতনের সম্পর্ক, অপরদিকে ঈশ্বর—এটাই হ’ল আত্মার সঙ্গে দেহের সম্পর্ক।
দ্বৈত ও অদ্বৈত নামে দুটি মতবাদ আছে। অদ্বৈত-দর্শনের প্রখ্যাত ব্যাখ্যাকর্তা শঙ্করাচার্য বলেন যে, ঈশ্বরে মানুষভাব আরোপ করার প্রবণতা হ’তে ঊর্ধ্বে উঠতে হবে সব মানুষকেই, এবং তখন তারা বুঝতে পারবে যে তারা হ’ল সত্যিকারের আত্মা, তাদের অন্তরজীবনের এবং জীবাত্মা ও দৃশ্যমান জগতের সারসত্তা; আর তখনই তারা উপলব্ধি করবে পরিপূর্ণ ঐক্য ও সামঞ্জস্য, সর্ববিধ অনৈক্য ও অসামঞ্জস্যের মধ্যে। কেবল তখনই পরমাত্মার সঙ্গে তাদের সত্তার পূর্ণ ঐক্যের উপলব্ধিতে তারা পৌঁছাবে এবং বহির্জগতের সব বস্তুই ধুয়ে-মুছে যাবে—বাইরের সবকিছুই হবে দিব্যভাবে পরিপৃক্ত।
দ্বৈত ও অদ্বৈত নামে দুটি মতবাদ আছে। অদ্বৈত-দর্শনের প্রখ্যাত ব্যাখ্যাকর্তা শঙ্করাচার্য বলেন যে, ঈশ্বরে মানুষভাব আরোপ করার প্রবণতা হ’তে ঊর্ধ্বে উঠতে হবে সব মানুষকেই, এবং তখন তারা বুঝতে পারবে যে তারা হ’ল সত্যিকারের আত্মা, তাদের অন্তরজীবনের এবং জীবাত্মা ও দৃশ্যমান জগতের সারসত্তা; আর তখনই তারা উপলব্ধি করবে পরিপূর্ণ ঐক্য ও সামঞ্জস্য, সর্ববিধ অনৈক্য ও অসামঞ্জস্যের মধ্যে। কেবল তখনই পরমাত্মার সঙ্গে তাদের সত্তার পূর্ণ ঐক্যের উপলব্ধিতে তারা পৌঁছাবে এবং বহির্জগতের সব বস্তুই ধুয়ে-মুছে যাবে—বাইরের সবকিছুই হবে দিব্যভাবে পরিপৃক্ত।
Third Eye তৃতীয় নয়ন |
শ্রীরামকৃষ্ণ: এক নতুন ধর্মের প্রবক্তা
ধর্ম কি? মানুষের সঙ্গে ধর্মর সম্পর্ক কি?
‘এসেছে এক নতুন মানুষ দেখবি যদি আয় চলে’। এই গান আমরা অনেক সময়ে গাই, বিশেষ করে ঠাকুরের জন্মতিথি উপলক্ষে নগরসংকীর্তনে। শ্রীরামকৃষ্ণ ‘এক নতুন মানুষ’। আমাদের আলোচ্য বিষয়— ‘শ্রীরামকৃষ্ণ : এক নতুন ধর্মের প্রবক্তা’। এ সম্পর্কে আলোচনার আগে সর্বপ্রথম জানা প্রয়োজন ধর্ম কি? ধর্ম যদি না বুঝি, ধর্মের স্বরূপ যদি জানা না থাকে, তাহলে শ্রীরামকৃষ্ণ নতুন ধর্মের প্রবক্তা, কি প্রাচীন ধর্মের প্রবক্তা— এ বোঝা দুঃসাধ্য।
মানুষের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক ওতপ্রোত। কেমন ওতপ্রোত? কতদিনের সম্পর্ক? উত্তরে যদি বলা যায়— যতদিন মানুষ ততদিন ধর্ম, তবে খুব ভুল হবে না। Encyclopaedia Britannica বলছেঃ “Man it has been said, is incurably religious.” সংজ্ঞাটি বেশ মজার। এ কেমন একটি ব্যাধি যে ব্যাধি থেকে মুক্ত হওয়া যায় না। আমরা যদি ধর্মের ইতিহাস পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখতে পাব যে, ধর্মের রূপের পরিবর্তন হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন যুগে, ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে। ফলে তার চেহারা পাল্টেছে ঠিকই, কিন্তু স্বরূপ বদলায়নি। এমন কোন যুগ দেখা যায় না যেখানে মানুষ আছে অথচ ধর্ম নেই। তার কারণ কি?
ধর্মের কথা বলতে গিয়ে স্বামীজী ভারি সুন্দর উদাহরণ দিয়ে আরম্ভ করেছেন। একটা মস্তবড় রেলগাড়ি আর একটা পিঁপড়ে রেল লাইনের উপর, পিঁপড়েটি একটা সামান্য জীব। রেলগাড়িটা দ্রুত বেগে আসছে। পিঁপড়েটা সরে গেল। একটা হয়তো পাখি বসে ছিল, রেলগাড়িটা দেখে সে উড়ে গেল। স্বামীজী ব্যাখ্যা করে দেখাচ্ছেন, একটি প্রাণী সে যত ক্ষুদ্রই হোক, তার এই নিজস্ব শক্তিটুকু আছে। কিন্তু এই যে বিরাট যন্ত্র, যার এত বেশি শক্তি, সে ছুটে চলেছে। কিন্তু ছুটে চলার পিছনে তার নিজস্ব কোন শক্তি নেই। সে সঞ্চালিত। তাকে কেউ চালাচ্ছে, তবেই সে চলছে। কারণ অতবড় একটা যন্ত্রদানব হলেও, সে কিন্তু জড়। আর এই যে সামান্য প্রাণী— সে চেতন। আবার মানুষের দিকে যখন তাকাই, তখন দেখি— সে রেলগাড়ি তৈরি করেছে, রেল ইঞ্জিন তৈরি করেছে। তার ভিতরে আরও অনেক বেশি শক্তির প্রকাশ। মানুষ দুর্বার গতিতে অনন্তকালের প্রবাহে ছুটে চলেছে। কত রকম প্রচেষ্টা, কত সংগ্রাম— যুগ যুগ ধরে মানুষ করেই চলেছে। কিসের জন্য তার এই সংগ্রাম?
মানুষ যখন এই বিষয়ে চিন্তা করতে শুরু করে, তখন সে কি দেখতে পায়? দেখতে পায় যে, তাকে যেন কত বন্ধনে আটকে রাখা হয়েছে। কালের বন্ধন, ব্যবধানের বন্ধন এবং আরও কত রকমের বন্ধন। তার অনেক কিছু সে বুঝতেও পারে না, জানতেও পারে না। কিন্তু সে বুঝতে চায়, জানতে চায়। মানুষের মন যত সূক্ষ্ম হয়, যত তার ভিতরের আত্মশক্তির প্রকাশ হয়, তত সে সমস্ত বন্ধনকে ভেঙে ফেলতে চায়। সে নিজে অনন্ত হতে চায়, স্বাধীন মুক্ত হতে চায়। কিন্তু একসময় সে দেখে যে, সে অসহায়। আর এগুতে পারছে না। আর কিছু ধরতে পারছে না, মনে হয় যেন থেমে যাচ্ছে। তবুও সে সংগ্রাম করছে। সে দেখছে যে, আমি চেষ্টা করছি, বুঝতে পারছি যে, আমি যা চাই, তা আমার হলো না। আমি যা চাই তা পেলাম না। এত রূপ-রসে ভরা এই সুন্দর জগৎ। কিন্তু তবু মনে হচ্ছে— না, না, তাতে আমার পেট ভরছে না। বুঝতে পারছি— আরও যেন কিছু আছে। আরও বড়, আরও সুন্দর।
আরো পড়ুন - অমর তপশ্রী ভগবান শিব
অসৎসঙ্গ
অসৎসঙ্গ সর্বদা পরিহার করবে। অসৎসঙ্গ করার বদলে একা থাকা ভাল। আমাদের অসৎসঙ্গ ও বাজে বিষয় ত্যাগ করা উচিত। প্রথমে নিজেকে শ্রদ্ধা করতে শেখো। তাহলেই অপরকে শ্রদ্ধা করতে পারব। সাহসী হও। কোন কিছুতেই ভীত হয়োনা।
যদি এই সমাজে উচ্চাসন লাভ করতে চাও, তাহলে মুখে মিষ্টি কথা ও অন্তরে বিদ্বেষ- এই দুটি বিপরীতভাব নিয়ে চলতে হবে। কিন্তু যদি আধ্যাত্মিক জগতে মহান হতে চাও এবং অন্যের জন্য বাঁচতে চাও, তাহলে সকলকে আত্মজ্ঞানে ভালবাস।
অজ্ঞাতকে যিনি জানান, তিনিই গুরু। সব থেকে প্রয়োজন গুরুর প্রতি বিশ্বাস। আমরা যদি তাঁকে পূর্ণ বিশ্বাস করে তাঁর চরণে নিজেকে সমর্পণ করতে পারি, তাহলে তিনি নিশ্চিতই আমাদের চরম লক্ষ্যে নিয়ে যাবেন
ভয় মানুষকে ধ্বংস করে। ভয় মানুষকে দুর্বল করে দেয়, জীবনের বাধা-বিপত্তির সাথে লড়ার ক্ষমতাকে নষ্ট করে। সে নিজেও জীবনের সমস্যাগুলিকে এড়িয়ে যায় ও সবাইকে তাই করতে বলে। সংশয়ও মানুষের ধ্বংসের মূল।
আমাদের বনের রাজা সিংহের মত হতে হবে। বনে আরও অনেক হিংস্র পশু আছে। কিন্তু তারা দলবদ্ধ হয়ে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু সিংহ সব সময় রাজার মত একা বিচরণ করে।
যদি জীবনকে উপভোগ করতে চাও তো Individuality (স্বাতন্ত্র) কে ছাড়তে হবে। নিজেদেরকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দাও। সবার সাথে এক হয়ে যাও। তাহলেই সুখী হবে।
যদি আমরা এক অখণ্ড জ্ঞানকে অনুভব করি, তাহলেই মৃত্যুজয় করা হবে। যখন আমরা পূর্ণ আনন্দের সাথে এক হতে পারব। তখনই দুঃখনিবৃত্তি হবে। তখনই সমস্ত ভ্রান্তি দূর হবে।
দুই প্রকারের সমাধি আছে। একটা হল নির্বিকল্প সমাধি, যাকে বলে ব্রহ্মজ্ঞান। সেখানে আত্মার জ্ঞান হয়। দ্বিতীয় সমাধি হল সবিকল্প সমাধি বা ভাব সমাধি, যেখানে ইষ্টদর্শন হয়। সন্ন্যাসী বা গৃহী, সবারই এই দুই সমাধি হতে পারে। এই সমাধি হলে মানুষ সেই সর্বশক্তিমানের দ্বারা পরিচালিত হয়।
কেউ যদি অজান্তে কোন ভুল করে, তাকে মিষ্টি কথায় ভূল ধরিয়ে দিতে হয়। কিন্তু কেউ যদি জেনেশুনেই ভূল করে যায়, তাহলে তাকেও ভূল ধরিয়ে দেওয়া উচিত, কিন্তু অন্যভাবে।
বিশাল বটবৃক্ষের মত হও, যে সকলকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য সদাই প্রস্তুত। জগতের সামনে দৃষ্টান্তস্বরূপ হয়ে ওঠ। নিঃস্বার্থ হও। একটা নিশ্বাসও নিজের জন্য ফেলো না।
আমাদের ভূলের জন্য আমরাই দায়ী। নিজেদের ব্যর্থতার জন্য মানুষ অপরকে দোষারোপ করে থাকে। যদি ব্যর্থ হও, মনে রাখবে যে তুমি সময়ের যথোপযোগ করনি। এর জন্য তুমি নিজেই দায়ী।
নিজে পূর্ণরূপে শুদ্ধ হলেই অপরকে আধ্যাত্মিক উপদেশ দেবে। এমন একজন মহাপুরুষ যাঁর মধ্যে আধ্যাত্মিকতার আগুন জ্বলছে, তাঁর সান্নিধ্যে এসেই মানুষ ঠিক ঠিক আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভ করতে পারে।
আদর্শ মানুষ হয়ে উঠতে গেলে একজনকে শুধু আধ্যাত্মিক জ্ঞান থাকলেই হবে না, তার জগতের জ্ঞানও লাগবে।
জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে গুরু আমাদের সাথে থাকেন। সদা-সর্বদা গুরু ও সত্যকে ধরে রাখাই আমাদের কর্ত্তব্য।
গুরু শিষ্যের নানাভাবে পরীক্ষা নেন, কিন্তু তার জন্য শিষ্যের চিন্তিত হওয়া উচিত নয়।
ভক্ত
গুরুজী আজ তাঁর ভক্তকে ডেকেছিলেন। ভক্ত গিয়ে তাঁকে প্রণাম করলে গুরুজী বলতে লাগিলেন— “আমাদের নিজেদের কাজটুকু করে যেতে হবে। পথে অনেক বাধা-বিপত্তি আসবে। কিন্তু তার জন্য থেমে গেলে চলবে না। প্রতিবন্ধকতাকে এড়িয়ে না গিয়ে পেরিয়ে যেতে হবে। মন যেন আমাদের বশে আনতে না পারে, আমাদেরই নিজেদের মনকে বশে আনতে হবে। বড় কাজ করার জন্য চাই তীব্র ইচ্ছা, সংকল্প এবং নিষ্ঠা।”
জনৈক ভক্ত গুরুজীকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে সে কিভাবে মানুষকে সাহায্য করবে, তার উত্তর দিতে গিয়ে গুরুজী বললেন— “শুধু তাদেরই সাহায্য করবে, যাদের সাহায্য করবার কেউ নেই, এবং যাদের সাহায্যের খুবই প্রয়োজন। যাকে সাহায্য করবার জন্য তার নিজের পরিবার ও সক্ষম আত্মীয়স্বজন আছে, তাকে সাহায্য করতে যাওয়া খুবই ভূল। এতে তাকে লোভী বানিয়ে দেওয়া হয়। তার সবার থেকে সাহায্য চাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। যথার্থ ধর্ম মানুষকে তার নিজের পায়ের ওপর দাঁড়াতে শেখায়।”
ভক্ত গুরুজীর পায়ের সামনে বসেছিল। গুরুজী আজ মনের সম্বন্ধে কথা বলছিলেন। তিনি বলতে লাগলেন— “মন চিন্তার সমষ্টি ছাড়া আর কিছুই নয়। যদি একটু গভীরভাবে চিন্তা করিস, তাহলে দেখবি যে এই চিন্তাগুলি জাগতিক বস্তু ছাড়া কিছুই নয়, যাকে আমরা নিজেদের থেকে বেশী দামী বলে ভাবি। কিন্তু যে মুহূর্ত্তে আমরা এই জাগতিক বস্তুগুলি থেকে নিজেদের বেশী দামী বলে জানতে পারব, তখনই দেখব এই কামনা-বাসনা, যা আমাদের অশান্তি-দুঃখ-যন্ত্রণার কারণ হয়েছিল, তা অদৃশ্য হয়েছে এবং তখনই আমরা পূর্ণ শান্তির অধিকারী হতে পারব।”
“আত্মা একটা স্থির মঞ্চ যার উপর আমাদের চিন্তা ও কামনা-বাসনাগুলি নেচে বেড়াচ্ছে। আমাদের চিন্তাগুলি তরঙ্গের মত এক একবার নেমে এসে আত্মার ভূমিকে স্পর্শ করছে এবং আবার উঠে যাচ্ছে। যে মুহূর্ত্তে গুরুর তীব্র আকর্ষণে সেই চিন্তাতরঙ্গ এসে আত্মার সাথে মিশে যাবে, তখনই মনের (যা কিছু কামনা-বাসনা ও চিন্তার সমষ্টি) নাশ হবে, এবং তখনই আমরা পূর্ণ, আদর্শ মানুষ হয়ে উঠব।”
সকাল ১০টা। ভক্ত গিয়ে গুরুজীকে প্রণাম করলে গুরুজী তাকে বসতে বললেন। ভক্ত যথাস্থানে উপবিষ্ট হলে গুরুজী তেজোদীপ্ত কন্ঠে বললেন— “সাহসী, নির্ভীক হও। সব সময় সত্য কথা বলার চেষ্টা করবে। জগতের মানুষ সর্বদা অপরকে খুশী করে নিজের স্বার্থপূরণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু যে সর্বদা সত্যে থাকে, এবং নিজের আদর্শের বিনিময়ে অন্যকে খুশী করার চেষ্টা করে না, তার পথ কন্টকাকীর্ণ। কিন্তু প্রথম পথটি অস্থায়ী, সেই পথ যারা বেছে নেয়, তাদের ধ্বংস অনিবার্য। দ্বিতীয় পথের পথিকেরা অমর হয়ে যান।”
আজ গুরুজী গুরুতত্ত্ব সম্বন্ধে বলতে গিয়ে বললেন— “নির্গুণ ব্রহ্ম কোন কাজ করতে পারে না। কারণ তাতে দ্বিতীয় কোন বস্তু নেই। কোন কার্য করতে হলে বা কারো উপকার করতে হলে বা কাউকে উদ্বুদ্ধ করতে হলে নির্গুণ ব্রহ্মকে সগুণ ব্রহ্মের সাহায্য নিতে হয়, কারণ মাধ্যম ছাড়া শুধুমাত্র জ্ঞান দিয়ে কিছু করার উপায় নেই। যেমন ডাক্তারের কাছে কেবল ডাক্তারীর জ্ঞান থাকলেই হবে না, রোগ সারাতে হলে ঔষধ, ছুরী এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতির সাহায্যে নিতে হয়। ঠিক তেমনই অজ্ঞানীর অজ্ঞান নাশ করতে হলে নির্গুণ ব্রহ্মকে গুণান্বিত হয়ে তাকে নির্গুণে নিয়ে যেতে হয়। অজ্ঞান নাশ করার সাথে সাথে নির্গুণ তার স্বরূপে ফিরে যায়। তখন যা ছিল তাই।”
ধ্যান
আত্মানন্দ শুধুমাত্র ধ্যান-তপস্যাতেই ডুবিয়া থাকিতে পারেন নাই। প্রকৃতপক্ষে ‘আত্মনো মোক্ষার্থৎ জগদ্ধিতার চ’ ইহাই ছিল তাঁহার শ্রীগুরুর প্রত্যাদিষ্ট জীবনাদর্শ। তাই ‘শিবজ্ঞানে জীবসেবা’র আবেদনও তাঁহার হৃদয়ে জ্ঞানচর্চা বা ভক্তিসাধনারই অনুরূপ সাড়া জাগাইত। ১৮৯৯ খ্রীষ্টাব্দের ৩১শে মার্চ, স্বামিজীর আদেশে রামকৃষ্ণ মিশন যখন প্লেগ-কবলিত কলিকাতাবাসীর সেবায় অগ্রসর হইয়াছিলেন, তখন সেই ঐতিহাসিক সেবাকার্যে আত্মানন্দের সেবা-নিষ্ঠার অদ্ভুত পরিচয় পাওয়া গিয়াছিল। ঐ সেবান্দোলনের নেতা ছিলেন স্বামিজীর প্রিয় শিষ্য সদানন্দ স্বামী—আত্মানন্দ ও ভগিনী নিবেদিতা ছিলেন তাঁহারই প্রধান সহকারিদ্বয়। ১৯০০ খ্রীষ্টাব্দের শেষাশেষি বা ১৯০১-এর প্রথম দিকে তিনি কিষেণগড়ে দুর্ভিক্ষ-পীড়িত জনসাধারণের সেবায় গুরুভ্রাতা কল্যাণানন্দকে সাহায্যার্থ মঠ হইতে প্রেরিত হইয়াছিলেন। সেখানেও তাঁহার উদ্যম বিস্ময়কর ছিল। আত্মানন্দের এই সেবাভাব যথার্থই প্রত্যক্ষ-অনুভবজাত,—নিছক কর্তব্যবুদ্ধি-প্রণোদিত ছিল না। পরবর্তী জীবনেও দেখা যাইত, কত নিষ্ঠা ও প্রাণ সংযুক্ত থাকিত তাঁহার সেবাদৃষ্টিতে। যখন তিনি ঢাকা মঠের অধ্যক্ষ, তখন একদিন আশ্রম পরিচালিত চিকিৎসালয়ের রোগীদের পথ্য গ্রহণের পূর্বে সাধু সেবকগণ আহার করিতে বসিলে, তিনি ব্যথিতচিত্তে সকলকে তিরস্কার করিয়া বলিয়াছিলেন, “নারায়ণদের আগে না খাইয়ে, তোমরা কি করে খেতে বসলে?” আহা সেদিন কতই না বিরক্তি ও বেদনা তাঁহার মুখেচোখে ফুটিয়া উঠিয়াছিল! মানুষের মধ্যে এই নারায়ণ-দৃষ্টি আত্মানন্দের জীবনে অতি স্বাভাবিক হইয়াছিল, স্বামিজীরই কৃপায়।
আত্মানন্দের গুরুভক্তি ও গুরুবাক্যে বিশ্বাস ছিল অনন্যসাধারণ। বরাবরই তিনি নিরামিষাশী—মনে হয়, এ সংস্কার তাঁহার বেশ প্রবলই ছিল। স্বামিজী একদিন শিষ্যের এই সংস্কার কত দৃঢ়, অথবা তাঁহার গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা কতখানি অকপট তাহা পরীক্ষার জন্য সহসা নিজের হাতে মাছের টুকরা আত্মানন্দের পাতে তুলিয়া দিয়াছিলেন। গুরুদেবের প্রসাদজ্ঞানে শিষ্য নিঃসঙ্কোচে ও পরম শ্রদ্ধার সহিত সেই মাছ গ্রহণ করিতে উদ্যত হইলে স্বামিজী সংস্কারমুক্ত শিষ্যের ভক্তিতে প্রীত হন, এবং তাঁহার নিষ্ঠার খুব প্রশংসা করিয়া উহা ভঙ্গ করিতে নিষেধ করেন। স্বামী আত্মানন্দের জীবনের সর্ববিধ সিদ্ধির মূলে ছিল, তাঁহার অগাধ বিশ্বাস—অবিচল গুরুভক্তি। একদা স্বামিজী তাঁহার নিজের সম্পর্কে নানা উদ্ভট ও কৌতুকপূর্ণ কতকগুলি মন্তব্য করিয়া সরল শিষ্যকে পরখ করিবার জন্য বলেন, “...ভেবে দেখ্, তবুও কি আমাকে তুই গুরু বলে মানবি?” আত্মানন্দ মুহূর্ত বিলম্ব না করিয়া উত্তর দিয়াছিলেন, “আপনি যা খুশি বলুন, যা ইচ্ছা করুন। আমি জানি আপনিই আমার ইহকাল-পরকাল।” পরিণত বয়সে তাঁহাকে প্রায়ই বলিতে শোনা যাইত, “গুরুবাক্যে ও বেদান্তবাক্যে বিশ্বাস সাধুজীবনের শ্রেষ্ঠ সম্বল।
এখন আস্তিক কাকে বলবো? প্রাচীনকালে আস্তিক বলতে বোঝাতো, যে মানুষ জীবাত্মা, পরমাত্মা ও বেদ—এই তিনটিকে মানে। পরবর্তী বৌদ্ধযুগে আস্তিক শব্দের ব্যাখ্যাটায় কিছুটা পরিবর্তন এসে যায়। পরিবর্তিত ব্যাখ্যায় বলা হ’ল, যে ব্যাষ্টি জীবাত্মা, পরমাত্মা ও বেদ—এই তিনের কোনো একটিকে মানে সে আস্তিক। বেদ বলতে বোঝায় যথার্থ জ্ঞান, সত্যিকারের জ্ঞান! বেদ বলতে কোনো বিশেষ পুস্তককে বোঝায় না। বেদ বলতে বোঝায় পারমার্থিক জ্ঞান, আধ্যাত্মিক জ্ঞান। এটাই বেদ শব্দের খাঁটি অর্থ। ধরো, কোথাও বলা হয়েছে মানুষ কীভাবে চুরি করবে, কীভাবে ডাকাতি করবে—এটাও তো এক ধরনের জ্ঞান। তবে এই ধরনের জ্ঞানকে বেদ বলা যাবে না।
সর্বাগ্রে প্রয়োজন আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও এই দৃষ্টিকোণ থেকে আমি বলবো যে জীবাত্মা, পরমাত্মা ও বেদ এই তিনকেই যে মানে সে হ’ল আস্তিক। যোগ শব্দের এইটিই হ’ল ঠিক ব্যাখ্যা। বৌদ্ধযুগের ব্যাখ্যায় যে পরিবর্তন ঘটানো হয়েছিলো সেটা মোটেই উচিত কাজ হয়নি। যে জীবাত্মাকে মানে কিন্তু পরমাত্মা বা বেদকে মানে না তার আধ্যাত্মিক প্রগতি কীভাবে হবে? জীবাত্মা কোন্ দিকে যাবেন? আমরা যখন আধ্যাত্মিক প্রগতির কথা বলবো তখন জীবাত্মা কোন্ পক্ষে যাবেন? কারণ পরমাত্মা সম্পর্কে কিছু বলা যদি নাই হয়ে থাকে [সেক্ষেত্রে কী হবে?]। ঠিক তেমনি যদি কেউ পরমাত্মাকে মানে কিন্তু জীবাত্মাকে না মানে তাহলে তো জৈবী অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। আর যেখানে জীবই নেই সেখানে প্রগতির কথা ওঠে কী করে? তাই যোগীর পক্ষে জীবাত্মাকেও অবশ্যই মানতে হবে। জীবাত্মা আর পরমাত্মার পক্ষে সম্পর্ক নির্দ্ধারণের কাজটা করবে কে?—না, আধ্যাত্মিক জ্ঞান। তাই আধ্যাত্মিক জ্ঞানকেও অবশ্য অবশ্যই মানতে হবে। কারণ আধ্যাত্মিক জ্ঞান না থাকলে মানুষ এগিয়ে চলবে কী করে? জীবাত্মার পরমাত্মার দিকে অগ্রগতি হবেই বা কী করে? তাই আস্তিক তাকেই বলবো যে জীবাত্মা মানে, পরমাত্মা মানে, বেদ মানে।
শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তির ‘আনন্দ বচনামৃতম্’(১০, ১১, ১২, ১৩ খণ্ড) থেকে
আত্মানন্দের গুরুভক্তি ও গুরুবাক্যে বিশ্বাস ছিল অনন্যসাধারণ। বরাবরই তিনি নিরামিষাশী—মনে হয়, এ সংস্কার তাঁহার বেশ প্রবলই ছিল। স্বামিজী একদিন শিষ্যের এই সংস্কার কত দৃঢ়, অথবা তাঁহার গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা কতখানি অকপট তাহা পরীক্ষার জন্য সহসা নিজের হাতে মাছের টুকরা আত্মানন্দের পাতে তুলিয়া দিয়াছিলেন। গুরুদেবের প্রসাদজ্ঞানে শিষ্য নিঃসঙ্কোচে ও পরম শ্রদ্ধার সহিত সেই মাছ গ্রহণ করিতে উদ্যত হইলে স্বামিজী সংস্কারমুক্ত শিষ্যের ভক্তিতে প্রীত হন, এবং তাঁহার নিষ্ঠার খুব প্রশংসা করিয়া উহা ভঙ্গ করিতে নিষেধ করেন। স্বামী আত্মানন্দের জীবনের সর্ববিধ সিদ্ধির মূলে ছিল, তাঁহার অগাধ বিশ্বাস—অবিচল গুরুভক্তি। একদা স্বামিজী তাঁহার নিজের সম্পর্কে নানা উদ্ভট ও কৌতুকপূর্ণ কতকগুলি মন্তব্য করিয়া সরল শিষ্যকে পরখ করিবার জন্য বলেন, “...ভেবে দেখ্, তবুও কি আমাকে তুই গুরু বলে মানবি?” আত্মানন্দ মুহূর্ত বিলম্ব না করিয়া উত্তর দিয়াছিলেন, “আপনি যা খুশি বলুন, যা ইচ্ছা করুন। আমি জানি আপনিই আমার ইহকাল-পরকাল।” পরিণত বয়সে তাঁহাকে প্রায়ই বলিতে শোনা যাইত, “গুরুবাক্যে ও বেদান্তবাক্যে বিশ্বাস সাধুজীবনের শ্রেষ্ঠ সম্বল।
যোগী অবশ্যই আস্তিক হবেন
যোগ বস্তুটা কী? যোগের ঠিক ঠিক অর্থটাই বা কী? দু’চারটা আসন শিখিয়ে দিয়ে কাউকে যোগী বানানো যায় না। যোগ হ’ল “সংযোগো যোগ ইত্যুক্তো জীবাত্মা-পরমাত্মনঃ।” এক্ষেত্রে সবচেয়ে মূল কথাটা হলো জীবাত্মার সঙ্গে পরমাত্মার সংযোগ অর্থাৎ এই দুই সত্তার মধ্যে চরম একাত্মতা স্থাপন যার ফলে জীবাত্মার আর পৃথক অস্তিত্ব থাকে না। চিনি আর লবনের মিশ্রণে যে যোগটা হ’ল আধ্যাত্মিক যোগ তা নয়। বরং চিনি আর জলের মিশ্রণে যেমন সরবৎ তৈরী হয়, দু’য়ে মিলে যেমন এক হয়ে যায় আধ্যাত্মিক যোগটা ঠিক সেই ধরনের জিনিস। সরবতে চিনির পৃথক অস্তিত্ব বোঝা যায় না। এটা কেবল addition-ই নয়, এটা হ’ল unification।
এ প্রসঙ্গে একটা কথা মনে রাখতে হবে যে যোগটা হবে জীবাত্মা ও পরমাত্মার মধ্যে অর্থাৎ যোগ হ’ল আস্তিকের জন্যে, নাস্তিকের জন্যে নয়। যে মানুষ নাস্তিক্যবাদের দ্বারা প্রেষিত হয়ে জগতের কাজ করে যোগ তার জন্যে নয়। নাস্তিক ছোট-বড়, ভাল-মন্দ, পারিবারিক-সামাজিক অথবা রাষ্ট্রনৈতিক—সে যে কাজই করুক না কেন তার জীবন দর্শন নাস্তিক্যবাদের ওপরে আধারিত। সে মানুষ যোগের অনুশীলন করতে পারে না। কারণ হ’ল, “সংযোগো যোগ ইত্যুক্তো জীবাত্মা-পরমাত্মনঃ” এই সূত্রানুসারে মানুষকে জীবাত্মা আর পরমাত্মা— এই দুই সত্তাকে তো মানতেই হবে। তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে এই যে যোগ সাধনা কেবল আস্তিকের পক্ষেই সম্ভব।
এ প্রসঙ্গে একটা কথা মনে রাখতে হবে যে যোগটা হবে জীবাত্মা ও পরমাত্মার মধ্যে অর্থাৎ যোগ হ’ল আস্তিকের জন্যে, নাস্তিকের জন্যে নয়। যে মানুষ নাস্তিক্যবাদের দ্বারা প্রেষিত হয়ে জগতের কাজ করে যোগ তার জন্যে নয়। নাস্তিক ছোট-বড়, ভাল-মন্দ, পারিবারিক-সামাজিক অথবা রাষ্ট্রনৈতিক—সে যে কাজই করুক না কেন তার জীবন দর্শন নাস্তিক্যবাদের ওপরে আধারিত। সে মানুষ যোগের অনুশীলন করতে পারে না। কারণ হ’ল, “সংযোগো যোগ ইত্যুক্তো জীবাত্মা-পরমাত্মনঃ” এই সূত্রানুসারে মানুষকে জীবাত্মা আর পরমাত্মা— এই দুই সত্তাকে তো মানতেই হবে। তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে এই যে যোগ সাধনা কেবল আস্তিকের পক্ষেই সম্ভব।
এটি অবশ্যই পড়ুন - দার্শনিক লালন ফকির
এখন আস্তিক কাকে বলবো? প্রাচীনকালে আস্তিক বলতে বোঝাতো, যে মানুষ জীবাত্মা, পরমাত্মা ও বেদ—এই তিনটিকে মানে। পরবর্তী বৌদ্ধযুগে আস্তিক শব্দের ব্যাখ্যাটায় কিছুটা পরিবর্তন এসে যায়। পরিবর্তিত ব্যাখ্যায় বলা হ’ল, যে ব্যাষ্টি জীবাত্মা, পরমাত্মা ও বেদ—এই তিনের কোনো একটিকে মানে সে আস্তিক। বেদ বলতে বোঝায় যথার্থ জ্ঞান, সত্যিকারের জ্ঞান! বেদ বলতে কোনো বিশেষ পুস্তককে বোঝায় না। বেদ বলতে বোঝায় পারমার্থিক জ্ঞান, আধ্যাত্মিক জ্ঞান। এটাই বেদ শব্দের খাঁটি অর্থ। ধরো, কোথাও বলা হয়েছে মানুষ কীভাবে চুরি করবে, কীভাবে ডাকাতি করবে—এটাও তো এক ধরনের জ্ঞান। তবে এই ধরনের জ্ঞানকে বেদ বলা যাবে না।
সর্বাগ্রে প্রয়োজন আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও এই দৃষ্টিকোণ থেকে আমি বলবো যে জীবাত্মা, পরমাত্মা ও বেদ এই তিনকেই যে মানে সে হ’ল আস্তিক। যোগ শব্দের এইটিই হ’ল ঠিক ব্যাখ্যা। বৌদ্ধযুগের ব্যাখ্যায় যে পরিবর্তন ঘটানো হয়েছিলো সেটা মোটেই উচিত কাজ হয়নি। যে জীবাত্মাকে মানে কিন্তু পরমাত্মা বা বেদকে মানে না তার আধ্যাত্মিক প্রগতি কীভাবে হবে? জীবাত্মা কোন্ দিকে যাবেন? আমরা যখন আধ্যাত্মিক প্রগতির কথা বলবো তখন জীবাত্মা কোন্ পক্ষে যাবেন? কারণ পরমাত্মা সম্পর্কে কিছু বলা যদি নাই হয়ে থাকে [সেক্ষেত্রে কী হবে?]। ঠিক তেমনি যদি কেউ পরমাত্মাকে মানে কিন্তু জীবাত্মাকে না মানে তাহলে তো জৈবী অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। আর যেখানে জীবই নেই সেখানে প্রগতির কথা ওঠে কী করে? তাই যোগীর পক্ষে জীবাত্মাকেও অবশ্যই মানতে হবে। জীবাত্মা আর পরমাত্মার পক্ষে সম্পর্ক নির্দ্ধারণের কাজটা করবে কে?—না, আধ্যাত্মিক জ্ঞান। তাই আধ্যাত্মিক জ্ঞানকেও অবশ্য অবশ্যই মানতে হবে। কারণ আধ্যাত্মিক জ্ঞান না থাকলে মানুষ এগিয়ে চলবে কী করে? জীবাত্মার পরমাত্মার দিকে অগ্রগতি হবেই বা কী করে? তাই আস্তিক তাকেই বলবো যে জীবাত্মা মানে, পরমাত্মা মানে, বেদ মানে।
শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তির ‘আনন্দ বচনামৃতম্’(১০, ১১, ১২, ১৩ খণ্ড) থেকে
ভগবৎ-প্রেম
যেদিন মানুষের হৃদয়ে ভগবৎ-প্রেম জন্মলাভ করে সেই দিনই ভগবানের সহিত তাহার মালাবদল হয়—মিলন হয়। এ মিলনের ঘটক প্রেম—প্রেমই জীব ও ভগবানের হৃদয়কে অচ্ছেদ্য যোগ-সূত্রে বাঁধিয়া রাখে।
যিনি অপরিচিত তাঁহাকে কি মানুষ ভালবাসিতে পারে? পারে বৈকি। অচেনাকেই ত ভালবাসা যায়, কারণ তাহার সীমা দেখিতে পাওয়া যায় না। তাই তাহার মধ্যে প্রেমিকের হৃদয় স্বাধীনভাবে সঞ্চরণ করিতে অবকাশ পায়। যেখানে সীমা দেখিতে পাওয়া যায় সেখানে ভালবাসা থাকে না—যাহা থাকে তাহা শুধু মায়ার শৃঙ্খল, ইন্দ্রিয়ের পিপাশা। তবে সীমার মধ্যে যখন অসীম আত্মপ্রকাশ করে তখন সীমাবদ্ধ বস্তুও সীমা হারাইয়া ফেলে ও প্রাণকে আকর্ষণ করে। অসীম অপরিচিত—জীবনের প্রতি মুহূর্তে সে পরিচিত হইতেছে বটে কিন্তু সে পরিচয়ের অন্ত নাই। এ জগৎ শত পরিচয়ের পরেও অপরিচিতই থাকিয়া যায়, ইহার চির নবীনতা কখনই ম্লান হয় না। কিন্তু ইহা প্রাণকে মোহিত করে।
অসীমের সীমা নাই—সীমার মধ্যেও তাহার সীমা খুঁজিয়া পাওয়া যায় না। তাই তাহাকে কোন কালে শেষ হয় না, হইতে পারে না। জীব নিত্য নব পরিচয়ে তাহাকে লাভ করে। অনন্ত কাল এইভাবেই চলিতে থাকে।
চেনার শেষ নাই বটে, কিন্তু তবু চেনা যায়। মানুষ যাহা চায়, মানুষের মনের মানুষ, তাহার সাধনার ধন: জীবনের আদর্শ, আকাঙ্ক্ষিত প্রেম ও সৌন্দর্যের ছবি, অব্যক্তভাবে অনন্তের বুকে লুক্কায়িত থাকে। যুগের পর যুগ কাটিয়া যায় কত কত জন্ম অতিবাহিত হয়, কত কঠোর তপস্যা, কত হা-হুতাশ, কত অন্বেষণ করিয়াও সে তাহা পায় না। কিন্তু হঠাৎ একদিন অতর্কিত ভাবে তাহা তাহার হৃদয়াকাশে ফুটিয়া উঠে। তখন সে যুগব্যাপী সাধনা ও পরিশ্রম সেই নিমেষের দর্শনেই সার্থক হইয়া যায়। সেই এক নিমেষের হাসি তাহার চির আশার সফলতা।
অচেনাকেই চিনিবার জন্য অন্য জীবনের সাধনা। অচেনাও ধরা দিবার জন্য ব্যাকুল। দুঃখরূপে, মৃত্যুরূপে সেই ত আসে। কঠোরতার মূর্তি ধরিয়া সেই প্রকাশ পায়। হৃদয়ের দ্বার রুদ্ধ করিয়া অহমিকার ঘনান্ধকারে মানুষ ঘুমাইয়া থাকে। সেই দ্বার ভগ্ন করিয়া নির্মমভাবে অহঙ্কারকে চূর্ণ করিয়া ভগবানের কৃপা হৃদয়ে উজ্জ্বল ভাবে আবির্ভূত হয়। তখন হৃদয় আলোকিত হয়, বন্ধন খসিয়া যায়, মলিনতা ও ভয় দূর হয়, নবীন জীবন সঞ্চারিত হয়, প্রাচীন সংস্কার নষ্ট হইয়া যায়।
দুঃখই ভগবানের আত্মপ্রকাশের প্রকৃত নিদর্শন। ‘তুমি যে আছ বক্ষে ধরে বেদনা তাহা জানাক্ মোরে’—দুঃখই জানাইয়া দেয় যে ভগবান্ নিত্যই জীবের সঙ্গে আছেন, তাহাকে আলিঙ্গন করিয়া ধরিয়া আছেন। দুঃখের মাত্রা তাঁহারই আত্মপ্রকাশের নিবিড়তা। যখন জীব সুখে থাকে, তখন তাহাকে বড় সন্তর্পণে থাকিতে হয়, কারণ স্বেচ্ছাচারের বশবর্তী হইয়া চলিতে গেলে তাঁর বিরাগ জন্মাইবার সম্ভাবনা। কিন্তু যখন জীবকে তিনি দুঃখে ফেলেন, আঘাত করেন, তখন আর সাবধানতার প্রয়োজন হয় না। তখন বন্ধন কাটিয়া যায়—স্বাধীনতার উদয় হয়, যে প্রবল আত্মাভিমান জীবকে শত শৃঙ্খলে জড়িত করিয়া রাখে তাহা বিলুপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে মুক্ত হয়, ছুটি পায়। তখন—
“দেবার নেবার পথ খোলসা ডাইনে বাঁইয়ে।”
তখন সমগ্র জগৎ জীবকে ডাকিতে থাকে—সকলেই তাহাকে ঘর ছাড়াইয়া দেয়। জীব তখন আর নিজের কল্পিত গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ থাকিতে পারে না, দুঃখ-দৈন্যময় ঘোর অন্ধকারে অসীম অনন্ত মৃত্যু-সাগরে ঝাঁপাইয়া পড়ে। ক্ষুদ্র ভালবাসাই মায়া,—তাহাতে জীব বদ্ধ হইয়া ভুলিয়া থাকে। কিন্তু যখন সে মায়া কাটাইয়া বাহির হইয়া পড়ে, তখন সে লাঞ্ছিত, অপমানিত, নিঃসঙ্গ, তখন আর তার বন্ধন কোথায়? সে তখন বাত্যাতাড়িত উদ্দাম বৈশাখী মেঘের মতন ছুটিতে থাকে, ‘আপন তেজে’, ‘একাকী’, অনাদরের খোলা রাস্তায় চলিতে থাকে। কিন্তু এ অনাদরই বস্তুতঃ ভগবানের “চরণ ধূলায় রঙীন চরম সমাদর!”
কর্ম
“নিন্দন্তু নীতিনিপুণাঃ যদি বা স্তুবস্তু
লক্ষ্মী সমাবিশতু গৃহং গচ্ছতু বা যথেষ্টম্।
অদ্যৈব মরণমস্তু যুগান্তরে বা
ন্যায়াৎ পথঃ প্রতিচলন্তি পদং ন ধীরাঃ।।
লক্ষ্মী সমাবিশতু গৃহং গচ্ছতু বা যথেষ্টম্।
অদ্যৈব মরণমস্তু যুগান্তরে বা
ন্যায়াৎ পথঃ প্রতিচলন্তি পদং ন ধীরাঃ।।
আমি যে কাজে হাত লাগিয়েছি, সঙ্গত ন্যায়সম্মত মনে করে যে কাজের সূত্রপাত ঘটিয়েছি তাতে যদি নীতিপুণ ব্যষ্টিরা, পণ্ডিতের দল যদি নিন্দেও করে করুক—আমার তাতে কিছু আসে-যায় না। আমি পণ্ডিতদের মুখাপেক্ষী নই। কারণ, পণ্ডিত মানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে—সর্বক্ষেত্রে না হোক—পণ্ডিত মানে জরদ্গব। অর্থাৎ কাজ করতেও সে পারে না, সাহসও তার নেই, বুদ্ধিও তার নেই— অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সে পরপিণ্ডভোজী। পণ্ডিতা-বনিতা-লতা অর্থাৎ পণ্ডিত, নারী আর লতা একটা জিনিসের আশ্রয়ে বাড়ে। এমন জিনিসটি আমরা চাই না। তাই পণ্ডিতের ওপর নির্ভরশীল নই। আর বনিতা অর্থাৎ নারী। আমাদের মেয়েরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াবার সাধনায় রত রয়েছে আর আমি আশা করি অল্পদিনের মধ্যেই তারা দাঁড়িয়ে পড়বে। বনিতা অর্থাৎ নারী সম্বন্ধে এই যে কথা—অন্যের ওপর নির্ভর করে দাঁড়িয়ে থাকে, একথাটাও তারা মিথ্যা প্রমাণিত করবে বলেই আমার দৃঢ় ধারণা।
পণ্ডিতের দল— আমি যাদের সম্বন্ধে এক্ষুনি বললুম, জরদ্গব—তারা নিন্দে করে করুক, আমার তাতে কিছু আসে যায় না। বরং তাদের নিন্দেটা শোণবার মত অবকাশও আমার নেই, অতটুকু সময়ও আমি দেব না। তাদের নিন্দে শোণবার মত আমি সময়টুকুও দেব না। আর তারা যদি প্রশংসা করে সেটা শোণবার মত সময়ও আমার নেই। আমার কাজ নিয়ে কথা—লক্ষ্যপূর্তি নিয়ে কথা।
আর আমার এই কাজের ফলে ধনের দেবী লক্ষ্মী যদি আমার গৃহে অধিষ্ঠিতা থাকেন খুব ভাল—না থাকেন, তাতেও কিছু আসে-যায় না। আমার প্রাউট দর্শন পুঁজিবাদাশ্রয়ী নয়। সুতরাং লক্ষ্মীর কৃপাপ্রার্থী নয়। আর তাছাড়া আজকের মানুষ বুঝতে শিখেছে, আগেকার মানুষ বুঝত না, লক্ষ্মী তো পাপের ঘরেই বাসা বাঁধে। চুরি, ডাকাতি এ সব না করে কখনো বড়লোক হওয়া যায়? —যায় না। তার মানে লক্ষ্মী যেখানে পাপ সেখানে। লক্ষ্মী যদি আমার গৃহে থাকতে চান, থাকুন; আমার কিছু-আসে যায় না। যদি চলে যেতে চান, যেতে পারেন। আমার কোন আপত্তি নেই।
সেই রাজার একটা গল্প ছিল না! এক রাজা ভীষণ ধার্মিক ছিলেন। তিনি বললেন, আমি একটা হাট বসাব। কিন্তু সেই জায়গাটায় কেনাকাটা বেশী হত না বলে হাটে বিক্রি করার জন্য বড় একটা লোক আসত না। ক্রেতা ছিল না। তখন রাজা বললেন—ঠিক আছে, সূর্যাস্ত পর্যন্ত যে জিনিসগুলো বিক্রি হবে না সে জিনিসগুলো আমি কিনে নেব। তখন বিক্রেতারা আসতে শুরু করলেন। একদিন একজন নিয়ে এলেন একটা অলক্ষ্মীর মূর্তি। অলক্ষ্মী কে আর কিনবে, কে আর ঘরে রাখবে? সুতরাং কেউ কিনল না। তখন লোকটা রাজাকে বললে— আপনি তো বলেছিলেন, যা বিক্রি হবে না তা আপনি কিনে নেবেন। তবে এটা কিনে নিন। রাজা বললেন—নিশ্চয়ই। কিনেও নিলেন। তারপর সেদিন রাত্রে রাজা শুয়ে আছেন। শব্দ শুণছেন যেন কে কাঁদছে,—কোন একজন নারী। রাজা খুঁজতে খুঁজতে এলেন। এসে বললেন—কে তুমি? দেখলেন, একজন নারী কাঁদছে। শুধোলেন— তুমি কে? উত্তর এল—আমি তোমার রাজ্যের রাজলক্ষ্মী। তুমি এত রাত্রে কাঁদছ কেন? কী ব্যাপার? —রাজা আবার শুধোলেন। তুমি ঘরে অলক্ষ্মী ঢুকিয়েছ, আমি তো সেখানে থাকতে পারিনা।
পণ্ডিতের দল— আমি যাদের সম্বন্ধে এক্ষুনি বললুম, জরদ্গব—তারা নিন্দে করে করুক, আমার তাতে কিছু আসে যায় না। বরং তাদের নিন্দেটা শোণবার মত অবকাশও আমার নেই, অতটুকু সময়ও আমি দেব না। তাদের নিন্দে শোণবার মত আমি সময়টুকুও দেব না। আর তারা যদি প্রশংসা করে সেটা শোণবার মত সময়ও আমার নেই। আমার কাজ নিয়ে কথা—লক্ষ্যপূর্তি নিয়ে কথা।
আর আমার এই কাজের ফলে ধনের দেবী লক্ষ্মী যদি আমার গৃহে অধিষ্ঠিতা থাকেন খুব ভাল—না থাকেন, তাতেও কিছু আসে-যায় না। আমার প্রাউট দর্শন পুঁজিবাদাশ্রয়ী নয়। সুতরাং লক্ষ্মীর কৃপাপ্রার্থী নয়। আর তাছাড়া আজকের মানুষ বুঝতে শিখেছে, আগেকার মানুষ বুঝত না, লক্ষ্মী তো পাপের ঘরেই বাসা বাঁধে। চুরি, ডাকাতি এ সব না করে কখনো বড়লোক হওয়া যায়? —যায় না। তার মানে লক্ষ্মী যেখানে পাপ সেখানে। লক্ষ্মী যদি আমার গৃহে থাকতে চান, থাকুন; আমার কিছু-আসে যায় না। যদি চলে যেতে চান, যেতে পারেন। আমার কোন আপত্তি নেই।
সেই রাজার একটা গল্প ছিল না! এক রাজা ভীষণ ধার্মিক ছিলেন। তিনি বললেন, আমি একটা হাট বসাব। কিন্তু সেই জায়গাটায় কেনাকাটা বেশী হত না বলে হাটে বিক্রি করার জন্য বড় একটা লোক আসত না। ক্রেতা ছিল না। তখন রাজা বললেন—ঠিক আছে, সূর্যাস্ত পর্যন্ত যে জিনিসগুলো বিক্রি হবে না সে জিনিসগুলো আমি কিনে নেব। তখন বিক্রেতারা আসতে শুরু করলেন। একদিন একজন নিয়ে এলেন একটা অলক্ষ্মীর মূর্তি। অলক্ষ্মী কে আর কিনবে, কে আর ঘরে রাখবে? সুতরাং কেউ কিনল না। তখন লোকটা রাজাকে বললে— আপনি তো বলেছিলেন, যা বিক্রি হবে না তা আপনি কিনে নেবেন। তবে এটা কিনে নিন। রাজা বললেন—নিশ্চয়ই। কিনেও নিলেন। তারপর সেদিন রাত্রে রাজা শুয়ে আছেন। শব্দ শুণছেন যেন কে কাঁদছে,—কোন একজন নারী। রাজা খুঁজতে খুঁজতে এলেন। এসে বললেন—কে তুমি? দেখলেন, একজন নারী কাঁদছে। শুধোলেন— তুমি কে? উত্তর এল—আমি তোমার রাজ্যের রাজলক্ষ্মী। তুমি এত রাত্রে কাঁদছ কেন? কী ব্যাপার? —রাজা আবার শুধোলেন। তুমি ঘরে অলক্ষ্মী ঢুকিয়েছ, আমি তো সেখানে থাকতে পারিনা।
আরো পড়ুন - মহাভারতের চরিত্র সমূহ
দুঃখ
জীব কাঁদে, কেন না জীব জাগিয়াছে, জাগিয়া নিজের অভাব বুঝিতে পারিয়াছে। অভাববোধ ফুটিয়াছে, অথচ অভাব-নিবৃত্তির উপায় খুঁজিয়া পাইতেছে না, তাই সে কাঁদে।
যেদিন জীব নিজের প্রিয়জন লইয়া বড় আশায় এই স্বভাবের খেলাঘরে প্রবেশ করিয়াছিল, সেদিন মায়ামোহের আবেশে, তন্দ্রার ঘোরে, এ সংসার তাহার নিকট স্বপ্নপটের ন্যায় অতি মধুরই বোধ হইয়াছিল। স্বভাবের অতুলনীয় শোভা সত্যই সেদিন তাহাকে বিমুগ্ধ করিয়াছিল।
কিন্তু সে আনন্দ আজ কোথায় মিলাইয়া গেল! স্বভাব ত’ আজও তেমনই সুন্দর আছে, শত পরিবর্তন সত্ত্বেও জগৎ এখনও ত’ পূর্বের ন্যায় অপার মাধুরীর ভাণ্ডারস্বরূপই রহিয়াছে। এখনও সেই বসন্ত আসে, সেই কুসুম ফোটে, সেই মলয় বহে, সেই নক্ষত্র জ্বলে, “চন্দ্রমাশালিনী সা মধুযামিনী” এখনও দেখা দিয়া যায়— শৈশবের হাসি, যৌবনের উল্লাস এখনও জগৎ হইতে বিদায় লয় নাই। এ সবই ত’ সুন্দর—অতি সুন্দর। তবে আজ আর প্রাণ তাহাতে রস পায় না কেন? হৃদয়ের আনন্দ কিজন্য শুকাইয়া গেল।
শুকাইয়া গেল, তাহার কারণ আছে। “নিশার স্বপন-সুখে সুখী যেই, জাগে সে কাঁদিতে।” জীব এতদিন যে-সুখে আত্মবিস্মৃত হইয়া প্রকৃতির নন্দনসুষমা উপভোগ করিয়াছিল, সেটা অস্থায়ী মায়িক সুখ, স্বপ্নের খেলা মাত্র। জাগরণের সঙ্গে তাই তাহা কোথায় অদৃশ্য হইয়া গিয়াছে, সে খেলাঘর অদৃষ্টচক্রে কোথায় নিষ্পেষিত হইয়া গিয়াছে।
মানুষ ভালবাসিতে চায়, কিন্তু ঠিক ভালবাসিতে পারে না, জানেও না। তাই তাহার ভাগ্যে দুঃখ ভিন্ন আনন্দ কোথাও জোটে না। ঐ ভালবাসা যে বস্তু তাহা মায়ার রাজ্যে থাকিয়া যথার্থভাবে অনুভব করা যায় না। সেইজন্য মায়ান্ধ মনুষ্য ইহার পূর্ণরূপ দর্শন করিতে পারে না। যেদিন পারিবে সেদিন মায়ার অবগুণ্ঠন তাহার নয়ন হইতে ঘুচিয়া যাইবে। সে যোগমায়ার আশ্রয় গ্রহণ করিয়া পরমামৃতের মধুর আস্বাদ প্রাপ্ত হইবে।
ভালবাসাই আত্মজ্ঞান, আত্মদর্পণ না হইলে যেমন নিজের রূপ নিজে দেখিতে পাওয়া যায় না, সেইরূপ আধার না পাইলে ভালবাসাও চিরতার্থ হয় না। মানুষ নিজেকেই নিজে ভালবাসে বটে, কিন্তু যতক্ষণ নিজের স্বরূপ আর একজন মানুষের স্বচ্ছ হৃদয়-দর্পণে প্রতিবিম্বিত না দেখিতে পায় ততক্ষণ নিজেকে চিনিতেও পারে না, ভালবাসিতেও পারে না। তাই দর্পণ চাই, “দুই” না হইলে ভালবাসার সম্ভাবনা কোথায়? ‘পর’ ব্যতীত আত্মপ্রেম নিস্ফল। প্রকৃতিও দর্পণ বটে, কিন্তু এ দর্পণে মানুষ নিজেকে সম্পূর্ণভাবে দেখিতে পায় না। চিন্ময় না হইলে চিন্ময়কে ধারণ করিবে কে? তাই—“মানুষ মন চাহে মানুষেরি মন।”
মায়া-রাজ্যে ঘুরিতে ঘুরিতে কাহারও এরূপ মনের মিলন ঘটিয়া যায়; তখন উভয় মনে সমসূত্র-পাত হইয়া আত্মবিস্মৃত ঘটে, “প্রাণময়ে প্রাণ লীন” হইয়া যায়। একটা নেশার মন প্রাণ তখন বিভোর থাকে, নীল আকাশ, শ্যামল ধরণী, প্রকৃতির সকল বস্তুই তখন জীবের ভাবনেত্রের সম্মুখে অনির্বচনীয় সৌন্দর্যে মণ্ডিত হইয়া উঠে।
কিন্তু এ ভাব দীর্ঘকালস্থায়ী হয় না, এ নেশাও দুদিনেই ছুটিয়া যায়। যাহাকে অবলম্বন করিয়া এ রসের উদ্ভব হয়, যখন কালনেমির অবশ্যম্ভাবী আবর্তনে তাহা নয়নের অন্তরাল হইয়া যায়—তখন হৃদয় নীরস এবং যন্ত্রণায় প্রপীড়িত হইয়া উঠে। জীবের ‘সাজান বাগান’ এইভাবেই শুকাইয়া যায়। অতীতের বেদনাময়ী স্মৃতি বক্ষে পোষণ করিয়া জীব নৈরাশ্যের অতল সমুদ্রে ডুবিয়া যাইতে চায়।
তখন বাহ্য প্রকৃতির ব্যঙ্গ তাহার হৃদয়কে আঘাত করে। বাহিরে বসন্ত
যায় আবার আসে, ফুল ঝরে আবার ফোটে, আঁধারের পরে আবার
আলো হাসে—কিন্তু অন্তরের ধন একবার চলিয়া গেলে আর ফিরিয়া পাওয়া যায় না।
ধন্যবাদ-
What is the meaning of the word Vedanta? What is Vedanta philosophy?
The word Vedanta means the end or the last part of the Veda.
Vedanta philosophy is a theistic branch of Hindu philosophy. The Upanishads are the main basis of Vedanta philosophy. In Vedanta philosophy, instead of Vedic sacrifices and rituals, meditation, self-control and spirituality.
Advaita Vedanta is the omniscient of Vedic philosophy. According to the pantheist, the true essence of man, the soul, is pure consciousness, and the absolute true Brahman is also pure consciousness.
Some people think that Vedanta is not a purely theoretical scripture, imaginary and practical. Such thinking is contrary to the truth. Vedanta is the most useful of all the 'philosophies' in the world. Professor Maxmারller rightly said, ‘Vedanta is the most important of the philosophies and the most comforting of the religions.
In India, philosophy has always been considered the theoretical aspect of religion and religion the practical aspect of philosophy.The flower of the tree of knowledge is philosophy and the fruit is religion. With this in mind, we can understand whether Vedanta is usable or not.
Let's try to understand what the word Vedanta means. Analyzing the meaning of the word 'Vedanta', we see that it is a mixed word which is composed of the two words 'Veda' and 'Anta'. The word 'Veda' comes from the Sanskrit word 'Bidh-dhatu', which means to know. So the word 'Veda' means knowledge or wisdom. The word 'end' is the same as the English word 'end'. Therefore the word Vedanta means the end of knowledge.
But where does that end, and what kind of end is that — that's the next question we need to know. Where do we find the end of knowledge? All the sciences and philosophies of the world are trying to unravel the underlying truths of nature and to know the truths as they are in reality. There will be no more relativity at the end of knowledge — there will be no more relation of space, time and causality. The last of knowledge cannot be finite-knowledge or knowledge of a particular part of the visible world; But this last place of knowledge must be the knowledge of all existence or the Supreme Being. This Supreme Being is the boundless ocean of knowledge. This is the origin of all perceptible matter. This is the foundation of our life and the true foundation of our earthly existence. That source of the natural world is also the end result of knowledge.
Divinity is the ultimate limit of all knowledge. What could be better than theology — higher, greater, and more true? That divination is the ultimate goal. We must reach that goal হোক sooner or later. All philosophers are trying to discover that destination; Although they have given it different names. Plato called it ‘good’; Spinoza says ‘substantia’; Kant says ‘transcendental thing-in-itself’; Emerson named it ‘Oversol’, someone said ‘Naumenon’; Others say ‘Brahman, Brahma, Vishnu, Shiva, Heavenly Father, Allah, Ahur Mazda, how many more names. The ocean of knowledge is the same, though called by various names. We cannot see and feel its fullness, but we can see it at some point in life. If we try to realize our own existence, what we really are — if we want to feel it, we have to discover in our hearts a spark, which is the hidden divinity. It emanates from that eternal wisdom and enlightenment. It is like a bubble floating on the boundless ocean of that Supreme Being. This perceptual object that we perceive through the senses is all just an expression of the divine power or divine will, which is the source of all natural energy.
God
Vedanta has three schools of thought. First, we will mention three methods. Then we show the harmony between them. Let us first discuss the dual method. As long as we think of ourselves as our bodies, as long as we are aware of the external world or the perceptual world, we think that there is a Creator or Ruler, and that Ruler is God. At first we think of him as the transcendent, the one who sits in the sky, above the clouds, whom we cannot reach. He is beyond the reach of our minds. In Judaism we find this level. Dualists believe that God is not known, He cannot be perceived, He is far away from us; He is so glorious or glorious that it is impossible to approach Him. This attitude has also developed in Islam. We must consider this as the first step towards realizing Him, who is the Infinite Being — the infinite ocean of knowledge, which is the foundation of the perceptual universe. At this level God feels that He is transcendent, that He exists outside the natural world. Then, as we gradually come to realize what the true nature of divinity is and what our relationship with divinity is, what do we see? We see that He is not far from us; He is here, there, everywhere; He is within us; He is worldwide. In fact, he has penetrated and existed in nature. He is universal. He does not rule from the outside, he rules from within. Just as the soul rules the body and immediately rules the body, so the Lord of the world has entered this natural world and is controlling every atom of it, and he is controlling it from within, not from without. All living beings are part of the Creator God — conscious, unconscious, and God. The relationship between the conscious and the unconscious on the one hand, and God on the other — that is the relationship of the body to the soul.
There are two doctrines called duality and duality. Shankaracharya, the eminent commentator on Advaita-philosophy, said that all human beings must rise above the tendency to impose human nature on God, and then they will realize that they are the true soul, the essence of their inner life and the essence of the animate and visible world; And only then will they realize full unity and harmony, in all kinds of disunity and inconsistency. Only then will they reach the realization of the complete unity of their being with Paramatman and all the objects of the external world will be washed away everything outside will be divinely saturated.
Sri Ramakrishna: The proponent of a new religion
What is religion? What is the relationship of religion with people?
‘A new man has come to see if the income goes away’. We sing this song many times, especially in the city anthem on the occasion of Thakur's birthday. Sri Ramakrishna is a 'new man'. Our topic is - 'Sri Ramakrishna: the proponent of a new religion'. Before discussing this, what is the first thing you need to know about religion? If we do not understand religion, if we do not know the nature of religion, then it is difficult to understand whether Sri Ramakrishna is the proponent of the new religion or the proponent of the old religion.
The relationship of religion with people is deep. How are you? How long is the relationship? If the answer is - as long as people are religion, then it will not be very wrong. Encyclopaedia Britannica says: "Man it has been said, is incurably religious." The definition is quite funny. This is a disorder that cannot be cured. If we review the history of religion, we will see that the form of religion has changed in different eras, in different situations. As a result, his appearance has changed, but not his appearance. There is no era where there are people but no religion. What is the reason?
Speaking of religion, Swamiji started with a beautiful example. A huge train and an ant on the railway line, the ant is a little creature. The train is speeding. The ant moved away. One might have been a bird sitting, seeing the train he flew away. Swamiji explains that an animal, no matter how small, has its own strength. But this huge machine, which has so much power, is running. But he has no power of his own to run. He performed. Someone is driving him, he is running. Because even though he is a huge machine monster, he is inanimate. And this little creature is conscious. When I look at people again, I see that they have made trains, they have made locomotives. The expression of much more energy inside him. Man is running at a relentless pace in the flow of eternity. How many efforts, how many struggles মানুষ people have been doing it for ages. What is his struggle for?
When a person starts thinking about this, what does he see? He sees how bound he is. Time bonds, interval bonds and many more. He doesn't understand or know much about it. But he wants to understand, wants to know. The more subtle the mind of man, the more his inner self is manifested, the more he wants to break all bonds. He wants to be eternal, to be free. But at one point he sees that he is helpless. Can't move on anymore. Can't catch anything else, seems to be stopping. Yet he is struggling. He sees that I am trying, realizing that what I want is not mine. I didn't get what I wanted. This beautiful world is so full of beauty. But still it seems - no, no, it does not fill my stomach. I understand that there is something more. Bigger, more beautiful.
Evil company
Bad company will always be avoided. Better a poor horse than no horse at all. We should give up bad company and bad things. Learn to respect yourself first. Only then can I respect each other. Be brave Don't be afraid of anything.
If you want to gain a higher position in this society, then you have to go with these two opposites - sweet words in your mouth and hatred in your heart. But if you want to be great in the spiritual world and live for others, then love everyone with self-knowledge.
He who informs the unknown is the guru. All that is needed is faith in the guru. If we can trust in Him and surrender at His feet, He will surely lead us to the ultimate goal.
Fear destroys people. Fear weakens people, destroys their ability to cope with life's obstacles. He himself avoids the problems of life and tells everyone to do the same. Doubt is also the root of human destruction.
The king of our forest must be like a lion. There are many more wild animals in the forest. But they go around in groups. But the lion roams alone like a king all the time.
If you want to enjoy life, you have to give up individuality. Spread yourself among everyone. Be one with everyone. Then you will be happy.
If we feel an unbroken knowledge, then death will prevail. When we can be one with full joy. Only then will there be grief. Only then will all illusions be removed.
There are two types of tombs. One is Nirvikalpa Samadhi, which is called Brahmajnana. There is knowledge of the soul. The second samadhi is the sabikalpa samadhi or bhav samadhi, where istadarshan takes place. Monks or housewives, everyone can have these two tombs. In this tomb man is guided by that Almighty.
If someone makes a mistake unknowingly, he has to make a mistake with sweet words. But if someone makes a mistake on purpose, he should be blamed, but in a different way.
Be like a huge banyan tree that is always ready to give shelter to everyone. Be an example to the world. Be selfless. Don't take a breath for yourself.
We are responsible for our mistakes. People blame each other for their own failures. If you fail, remember that you did not make the right time. You are responsible for this.
He will give spiritual advice to others only when he is completely pure. A great man in whom the fire of spirituality is burning, man can attain spiritual knowledge just by coming close to him.
In order to become an ideal person, one needs not only spiritual knowledge, but also knowledge of his world.
The Guru is with us in every step of life. It is our duty to always hold on to the Guru and the truth.
The guru tests the disciple in various ways, but the disciple should not be worried about it.
Fans
Guruji called his devotees today. When the devotees went and bowed to him, Guruji began to say: “We have to do our own thing. There will be many obstacles along the way. But it will not stop for him. Obstacles must be overcome. So that the mind cannot subdue us, we must subdue our own minds. I want strong will, determination and dedication to do great things. ”
When a devotee asked Guruji how he would help people, Guruji replied: "Only help those who have no one to help, and those who are in dire need of help. It is very wrong to go to help someone who has his own family and able relatives to help. This made him greedy. His tendency to seek help from everyone increases. True religion teaches people to stand on their own two feet. ”
The devotees sat at Guruji's feet. Guruji was talking about the mind today. He began to say: "The mind is nothing but a collection of thoughts. If you think a little deeper, you will see that these thoughts are nothing but worldly objects, which we think are more valuable than ourselves. But the moment we realize that we are more valuable than these worldly things, we will see that this desire, which has caused us unrest, sorrow, and pain, has disappeared, and only then can we have complete peace. ”
“The soul is a fixed stage on which our thoughts and desires are dancing. Our thoughts come down like waves one by one and touch the ground of the soul and rise again. The moment that thought wave comes under the Guru's intense attraction and merges with the soul, then the mind (which is the sum of all desires and thoughts) will be destroyed, and only then will we become full, ideal human beings. ”
10 o'clock in the morning. When the devotees went and bowed to Guruji, Guruji asked him to sit down. When the devotees sat down in the right place, Guruji said in a radiant voice: “Be brave, be fearless. Will always try to speak the truth. The people of the world always try to satisfy their own interests by pleasing others. But one who is always truthful, and does not try to please others in exchange for his own ideals, his path is thorny. But the first path is temporary, the destruction of those who choose that path is inevitable. The wayfarers of the second path become immortal. ”
Today Guruji, while talking about gravity, said: “Nirgun Brahman cannot do any work. Because there is no second object in it. In order to do something or to benefit someone or to inspire someone, Nirgun Brahman has to take the help of Sagun Brahman, because there is no way to do anything with knowledge alone without means. For example, a doctor does not only have to have medical knowledge, but to cure the disease he has to take medicine, knives and other equipments. In the same way, in order to destroy the ignorance of the ignorant, the Nirgun Brahman has to be enriched and taken to Nirgun. With the destruction of the unconscious, Nirgun returns to his form. That's what it was then. "
Meditation
Atmananda could not remain immersed only in meditation and austerities. In fact, ‘Atmano Moksharthat Jagaddhitar Cha’ was the revealed way of life of his Guru. Therefore, the appeal of 'Jivaseva in Shivajnana' also aroused in his heart a similar response to the practice of knowledge or devotion. When the Ramakrishna Mission, at the behest of Swamiji, proceeded to serve the plague-stricken people of Calcutta on March 31, 1899, a strange manifestation of Atmananda's devotion to service was found in that historic service. The leader of that Sebandolan was Swamiji's favorite disciple Sadananda Swami — Atmananda and Bhagini Nivedita were his main associates. At the end of 1900 AD or early 1901, he was sent from the monastery to help Guruvratana Kalyananda in the service of the famine-stricken masses in Kishengarh. There, too, his zeal was astonishing. This sense of service to Atmananda was not directly direct-perceived, but merely motivated by a sense of duty. It was also seen in later life how much devotion and soul were attached to his service. When he was the principal of the Dhaka Math, one day before the patients of the Ashram-run clinic were given food, the saints sat down to eat. He angrily rebuked them all and said, "How did you sit down to eat without feeding the Narayans first?" Ah, how much annoyance and pain was on his face that day! This Narayana-vision in human beings became very normal in the life of Atmananda, by the grace of Swamiji.
Atmananda's devotion to Guru and faith in Guru's words was unique. He has always been a vegetarian — I think this reform was quite strong. Swamiji one day, to test how strong this reform of the disciple was, or how sincere his respect for his guru was, suddenly lifted a piece of fish in his own hand into the leaf of Atmananda. When the disciple, at the Guru's grace, was about to take the fish without hesitation and with utmost reverence, Swamiji became pleased with the devotion of the reformed disciple, and highly praised his devotion and forbade him to break it. At the root of all the accomplishments of Swami Atmananda's life was his deep faith — unwavering devotion to Guru Swamiji once made some bizarre and funny remarks about himself and asked the simple disciple to test him, "... think about it, will you still call me a guru?" Atmananda replied without a moment's delay, "Say whatever you like, do whatever you want. I know that you are my life hereafter. ” In his old age, he was often heard to say, “Belief in Gurubakya and Vedanta Bakya is the best source of saintly life.
The yogi must be a believer
What is the object of addition? What exactly is the meaning of yoga? No one can be made a yogi by teaching two or four seats. Yoga is "Sanyogo Yoga Ityukto Jibatma-Paramatmanah." The most important thing in this case is the connection of Paramatma with the living soul, that is, the establishment of extreme oneness between these two entities so that the living soul no longer has a separate existence. The combination of sugar and salt is not spiritual yoga. Rather, spiritual yoga is just as much a mixture of sugar and water as it is a syrup. The separate existence of sugar in syrup is not understood. It's not just an addition, it's unification.
One thing to keep in mind in this context is that yoga will be between the living soul and the paramatman, that is, yoga is for the believer, not for the atheist. Yoga is not for the man who is inspired by atheism and does the work of the world. An atheist, big or small, good or bad, familial, social or political যে whatever he does, his life philosophy is based on atheism. He cannot practice human yoga. The reason is that, according to the formula of "Sanyo Yoga, etc., Jivatma-Paramatman:" man must accept these two entities, Jivatma and Paramatma. So the point is that yoga is possible only for the believer.
Now who should I call a believer? In ancient times, a believer meant that man meant the three living beings, the Paramatman and the Vedas. In the later Buddhist period, the interpretation of the word astik changed somewhat. In the modified interpretation, it is said that a person who is a living being, a paramatma and a Veda মানে one of these three means a believer. Veda means true knowledge, true knowledge! The Vedas do not refer to any particular book. The Vedas mean spiritual knowledge, spiritual knowledge. This is the true meaning of the word Veda. Suppose somewhere it is said how people will steal, how they will rob — this is also a kind of knowledge. However, such knowledge cannot be called Vede.
First and foremost, spiritual knowledge is required and from this point of view, I would say that the living being, the Paramatman and the Vedas mean that he is a believer. This is the exact meaning of the word yoga. The change in the interpretation of the Buddhist era did not work at all. What will be the spiritual progress of the one who means Jivatma but does not mean Paramatma or Veda? Where will the soul go? When we talk about spiritual progress, which side does the soul go to? Because if thereis nothing to be said about Paramatma [then what will happen?]. In the same way, if one believes in Paramatma but does not believe in Jivatma, then biological existence will be endangered. And where there is no living thing, what is the point of progress? So the yogi must also obey the living soul. Who will do the work of determining the relationship between the living soul and the paramatma? - No, spiritual knowledge. So spiritual knowledge must also be obeyed. Because if there is no spiritual knowledge, how can people move forward? Will the livin soul progress towards the paramatma or what? So the believer will tell him that Jivatma means, Paramatma means, Veda means.
From Sri Sri Anandamurti's 'Ananda Bachanamritam' (Volumes 10, 11, 12, 13)
Godly-love
The day the love of God is born in the heart of man, the day he is exchanged with God. The component of this union is love — it is love that binds the heart of the living being and God in an inseparable link.
Can people love a stranger? Maybe. The unknown can be loved, because its limits cannot be seen. So the heart of the lover is allowed to circulate freely in her. Where there is limit, there is no love — all that is there is the chain of Maya, the thirst of the senses. But when the infinite manifests itself within the limit, the finite object also loses the limit and attracts the soul. Infinite stranger - he is getting acquainted in every moment of his life, but there is no end to his identity. This world remains unfamiliar even after hundreds of identities, its eternal novelty never fades. But it fascinates the soul.
There is no limit to infinity - even within that limit, its limit cannot be found. So it never ends, it can't happen. The creature always gains him in a new identity. Eternity goes on like this.
There is no end to recognition, but it is still recognizable. Whatever man wants, the man of man's mind, the treasure of his pursuit: the ideal of life, the image of desired love and beauty, is implicitly hidden in the bosom of eternity. Age after age passes, no matter how many births are spent, no matter how hard austerities, no matter how much frustration, no matter how much he explores, he does not get it. But suddenly one day it suddenly burst into his heart. Then his age-long pursuit and hard work became successful in the blink of an eye. That one-moment smile is the success of his eternal hope.
The pursuit of another life to know the unknown. Desperate to catch strangers. Sadly, that comes in the form of death. That is revealed by holding the idol of harshness. People sleep in the darkness of ego by closing the door of the heart. By breaking that door and ruthlessly crushing the arrogance, the grace of God appeared brightly in the heart. Then the heart is enlightened, the bonds are loosened, the filth and fear are removed, new life is transmitted, the old reforms are ruined.
Sadness is the real manifestation of God's manifestation. ‘You know the pain in your chest More’ — sadly conveys that God is always with the living, embracing Him. The level of grief is the intensity of his debut. When the creature is happy, it has to live in great contentment, because if it continues to be subject to arbitrariness, it is likely to develop dislike. But when he hurts the creature, he no longer needs to be careful. Then the bond is broken — freedom arises, the strong-willed creature that keeps the creature bound in a hundred chains disappears, and as soon as it is released, it is released. Then:
"The path of giving and taking is left and right."
Then the whole world starts calling the creature — everyone throws him out of the house. The creature can no longer be confined within its imaginary boundaries, plunged into the infinite eternal death-sea in the utter darkness of misery. Maya is the small love, so the creature is closed and forgets. But when he comes out of Maya, he is humiliated, insulted, lonely, then where is his bond? He then goes on vacation like a wind-blown reckless Baishakhi cloud, ‘Apon Teje’, ‘Ekaki’, walking on the open road of disrespect. But this disrespect is in fact God's "extreme honor colored in the dust of the feet!"
ACT
“Nindantu nitinipuna: if or stubastu
Lakshmi samabishtu grhang gachchatu or enough.
Adyab maranamastu jugantare or
The path of justice is not slow.
I have nothing to do with the work that I have undertaken, the work that I think is justifiable, the work that I have started, even if the principled people, even the team of scholars, condemn it. I am not dependent on scholars. Because, Pandit means in most cases না not in all cases — Pandit means Zardgab. That is, he cannot work, he does not have the courage, he does not have the intellect — in most cases he is a parasite. Pandita-banita-lata means scholar, woman and the vine grows in the shelter of one thing. We don't want that. So I do not depend on the scholar. And Banita means woman. Our girls are struggling to stand on their own two feet and I hope they will soon be able to stand on their own two feet. It is my firm belief that this statement about Bonita, that is, women, who depend on others, will also be proved false.
Pundit's group: Those about whom I have just spoken, Zardgab - let them condemn, I have nothing to do with it. Rather, I do not have time to listen to their condemnation, I will not give that much time. I will not give them time to listen to their condemnation. And I don't have time to listen if they appreciate it. Talk about my work কথা talk about goal setting.
And as a result of this work of mine, if Lakshmi, the goddess of wealth, resides in my house, it is very good — if not, then nothing comes and goes. My Prout philosophy is not capitalist. So Lakshmi is not a benefactor. Moreover, today's people have learned to understand, the previous people did not understand, Lakshmi lives in the house of sin. Can you ever become rich without stealing and robbery? - Don't go. That means Lakshmi is where sin is. If Lakshmi wants to stay in my house, stay; I don't care. If you want to leave, you can go. I have no objection.
That king did not have a story! One king was very religious. He said, I will set up a market. But because there was not much shopping in that place, a big man would not come to sell in the market. The buyer was not. Then the king said, "All right, I will buy the things that will not be sold until sunset." Then the sellers started coming. One day someone brought a statue of Alakshmi. Who else will buy Alakshmi, who will keep it at home? So no one bought. Then the man said to the king: You said that you will buy what will not be sold. But buy it. The king said, "Of course." Bought and bought. Then that night the king is lying down. Listening to the sound as if someone is crying, - a woman. The king came looking for him. He came and said - who are you? He saw a woman crying. Shudholena: Who are you? Answer: I am Rajalakshmi of your kingdom. Why are you crying so late What's the matter ?The king repaid again. You put Alakshmi in the house, I can't stay there.
WOE
The creature cries, why didn't the creature wake up, wake up and realize its own lack. Feeling we have 'Run out of gas' emotionally, weeping for help.
On the day when the creature entered the playground of this nature with high hopes with its loved one, in the obsession of delusion, in the whirl of drowsiness, this world felt very sweet to him like a dream. The unparalleled beauty of nature really fascinated him that day.
But where did that joy go today! Nature is still so beautiful today, in spite of hundreds of changes, the world is still a treasure trove of immense sweetness as before. Still that spring comes, that blossom blooms, that Malay flows, that star shines, "Chandramashalini Sa Madhuyamini" can still be seen ি the smile of childhood, the joy of youth has not yet departed from the world. All this is beautiful — very beautiful. But why does the soul not get juice in it today? Why did the joy of the heart dry up?
It has dried up, there is a reason for it. "Whoever is happy with Nisha's dream, wakes up and cries." The happiness with which the creature has so far been self-absorbed and enjoying the beauty of nature is only temporary magical happiness, a game of dreams. With the awakening, therefore, where it has disappeared, where the playground has been crushed in the cycle of destiny.
People want to love, but can't love, don't even know. So in his destiny, sorrow and joy are nowhere to be found. The object of love cannot be properly felt in the realm of Maya. That is why the blind man cannot see it in its full form. Maya's veil will be removed from her eyes as soon as she can. He will take shelter of Jogmaya and get the sweet taste of Paramamrit.
Love is self-knowledge, without self-reflection, just as one cannot see one's own form, so love is not eternal without a base. Man loves himself, but he cannot know or love himself until he sees his own form reflected in another man's transparent heart-mirror. So I want a mirror, where is the possibility of love if not "two"? Self-love is useless without ‘after’. Nature is also a mirror, but in this mirror man cannot see himself completely. If not Chinmoy, who will hold Chinmoy? So - "People want the human mind."
Such a reunion of one's mind takes place while wandering in the realm of Maya; Then both the minds become self-absorbed and become self-absorbed, "the soul is absorbed in life". The mind and soul of an intoxicant are then alive, the blue sky, the green earth, all the objects of nature are adorned with indescribable beauty in front of the mind's eye.
But this feeling does not last long, this intoxication also goes away in two days. The heart is dull and afflicted with pain when the juice which is used to give rise to it, when it becomes an interval of the eyes in the inevitable rotation of Kalnemi. This is how the ‘decorated garden’ of the organism dries up. The creature wants to sink into the abyss of despair by cherishing the painful memories of the past.
Then the satire of external nature hit his heart. Spring outside
Comes again, flowers fall and bloom again, again after darkness
Alo smiles — but once the treasure of the heart is gone, it cannot be found again.
Thanks-
0 মন্তব্যসমূহ