ভগবান শব্দের প্রকৃত অর্থ কি? পরমেশ্বর ভগবান কে? তিনি কোথায় থাকেন?
(What is the real meaning of the word God)
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ |
ভগবান শব্দের প্রকৃত অর্থ কি? ভগবানের কয়টি গুন ও কি কি?
ভগবান শব্দের প্রকৃত অর্থ হল -
ঐশ্বর্যস্য সমগ্রস্য বীর্যস্য যশসঃ শ্রিয়ঃ।
জ্ঞানবৈরাগ্যয়োশ্চৈব ষণ্ণাং ইতীঙ্গনা ।।
ভগবান শব্দের অর্থ :
অর্থাৎ - সমগ্র ঐশ্বর্য,সমগ্র বীর্য,সমগ্র যশ,সমগ্র সৌন্দর্য,সমগ্র জ্ঞান ও সমগ্র বৈরাগ্য - এই ছয়টির সমাহারকে 'ভগ' বলে। এই ছয়টি অচিন্ত্য গুন যার মধ্যে অঙ্গাঙ্গিভাবে পরিপূর্ণরূপে রয়েছে তিনি ভগবান।একমাত্র শ্রীকৃষ্ণের মধ্যেই এই ষড়ৈশ্বর্য পূর্ণরূপে বিরাজমান।তাই তিনি এবং বিষ্ণুতত্ত্বরূপে তার বিস্তার সমূহই ভগবৎ পদবাচ্য।
শুধু তাই নয় ভগবান শব্দের প্রকৃত অর্থ হল এই ষড় ঐশ্বর্য, ১৬ কলা এবং ৬৪ গুণের অধিকারী যিনি, তিনিই হচ্ছেন স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান।
ষোল কলা কি কি?
১৬টি কলা হল যথাক্রমে -
১) অনিমা।
২) মহিমা।
৩) প্রাপ্তি।
৪) প্রাকাম্য।
৫) লঘিমা।
৬) ঈশিতা।
৭) কামাবয়াসিতা।
৮) বশিতা।
এই আট সিদ্ধি
৯) ঐশ্বর্য।
১০) বীর্য।
১১) যশঃ।
১২) শ্রী
১৩) জ্ঞান।
১৪) বৈরাগ্য।
এই ছয় ভগ
১৫) লীলা
১৬) কৃপা
এই হলো ১৬ টি কলা।এই কলাগুলি শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে নিত্য বর্তমান।
ভগবানের কয়টি গুণ ও কি কি?
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন চৌষট্টি (৬৪) গুণের অধিকারী।
এই ৬৪ টি গুণ হলো :
শ্রীল রূপ গোস্বামী পাদ শ্রীভক্তিরসামৃতসিন্ধুর দক্ষিণ বিভাগের বিভাব লহরীতে লীলা পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণের ৬৪ টি গুণের কথা উল্লেখ করেছেন, যথা -
(১) সুরম্যাঙ্গ - সুন্দর অঙ্গ (2) সর্ব লক্ষণাম্বিত - মহাপুরুষের ৩২ টি শারীরিক লক্ষণ ( 3 ) রুচির - নয়নতৃপ্তিকর সৌন্দর্য (৪) তেজিয়ান - প্রভাবশালী (৫) বলিয়ান -মহা বলবান (৬) বয়সাম্বিত - কিশোর (৭) বিবিধাদ্ভুত ভাষাবিৎ - সমস্ত রকমের ভাষায় সুপণ্ডিত (৮) সত্যবাক্য - যার বাক্য কখনো মিথ্যা হয় না (৯) প্রিয়ংবদ - অপরাধীকেও প্রিয় কথা বলেন (১০) বাবদৃক - যার মুখ নিঃসৃত বাক্য সুস্পষ্ট সুমধুর ও বর্ণ বিন্যাস যুক্ত (১১)সুপান্ডিত্য - যিনি সমস্ত শাস্ত্রে বিদ্বান এবং কর্তব্য যথাযথ পালনকারী ও নীতিজ্ঞ (১২) বুদ্ধিমান - সুতীক্ষ্ণ বুদ্ধি (১৩) প্রতিভাম্বিত - দ্রুত উপযুক্ত নব বুদ্ধি উদ্ভাবনকারী (১৪) বিদগ্ধ - নানা কলাবিলাসে যার চিত্ত সদা লিপ্ত (১৫) চতুর - একই সময়ে বহু কার্য সমাধান করতে পারেন (১৬) দক্ষ - দুষ্কর কার্যও যিনি সম্পাদন করতে পারেন(১৭) কৃতজ্ঞ- উপকারীর কোন উপকার যিনি ভুলেন না (১৮) সুদৃড় ব্রত - যার প্রতিজ্ঞা ও নিয়ম উভয়ই সত্য হয় (১৯) দেশ-কাল-সুপাত্রজ্ঞ - দেশ-কাল-পাত্র বুঝে ক্রিয়াশীল হন (২০) শাস্ত্রচক্ষু - শাস্ত্রানুসারে কার্য করেন (২১) শুচি - সর্বপাপনাশী ও সর্বদোষশূন্য (২২) বশী - জিতেন্দ্রিয় (২৩) স্থির - ফল উদয় না হওয়া পর্যন্ত কাজ করে থাকেন (২৪) দানটত - মঙ্গল সাধনের জন্য দুঃসহ ক্লেশও স্বীকার করেন (২৫) ক্ষমাশীল - অন্যের অনেক অপরাধ সহ্য করে চলেন (২৬) গম্ভীর - যার মনোভাব দুর্বোধ্য (২৭) ধৃতিমান - আকাঙ্ক্ষা শুন্য এবং ক্ষোভের কারণ থাকা সত্ত্বেও শান্ত (২৮) সম - রাগ ও দ্বেষ থেকে মুক্ত (২৯) বদান্য - দানবীর (৩০) ধার্মিক - স্বয়ং ধর্মযাজন করেন ও অপরকে করান (৩১) শূর - যুদ্ধ বিষয়ে উৎসাহী ও অস্ত্র প্রয়োগে বিচক্ষণ (৩২) করুন - অপরের দুঃখ সহ্য করতে পারেন না (৩৩) মান্যমানকৃত - গুরু ব্রাহ্মণ ও বৃদ্ধদের শ্রদ্ধা করেন (৩৪) দক্ষিণ - সুন্দর স্বভাব ও সুকোমল চরিত্র (৩৫) বিনয়ী - উদ্ধত প্রকৃতির নন (৩৬) হ্রীমান - দুর্বুদ্ধি স্বভাবে সংকোচ বোধ করেন (৩৭) শরণাগত পালক - শরণাগতদের পালন করেন (৩৮) সুখী - যাকে দুঃখ লেশমাত্র স্পর্শ করতে পারে না (৩৯) ভক্তসুহৃৎ - সুসেব্য ও দাসবন্ধু (৪০) প্রেমবশ - প্রিয়তামাত্রই বশীভূত হন (৪১) সর্বশুভঙ্কর - সকলে হিতকারী (৪২) প্রতাপী - স্বীয় পৌরুষ দ্বারা শত্রুদের প্রতপ্ত করেন (৪৩) কীর্তিমান - নির্মল যশের জন্য বিখ্যাত (৪৪) রক্তলোক - সকলের অনুরাগ-ভাজন (৪৫) সাধুসমাশ্রয় - সাধুদের প্রতিই পক্ষপাতী হন (৪৬) নারীগণ মনোহারী - সকল সুন্দরীর মন হরণ করেন (৪৭) সর্বারাধ্য - সকলের আগে তিনি পূজ্য (৪৮) সমৃদ্ধিমান - মহা সম্পত্তিশালী (৪৯) বরীয়ান - সকলের মধ্যে যিনি অতিশয় শ্রেষ্ঠ (৫০) ঈশ্বর - স্বতন্ত্র ও দুর্লঙ্ঘ্য এবং যারা আদেশ ব্রহ্মান্ড-পতিগণ পালন করেন (৫১) সদাস্বরূপসংপ্রাপ্ত - মায়া কার্যে বশীভূত নন (৫২) সর্বজ্ঞ - সবার মনের কথা জানেন এবং সর্ব কালের সর্ব লোকের কথা জানেন (৫৩) নিত্যনূতন - প্রতিক্ষণেই নব নবায়মান রূপে নিত্যসঙ্গীদের কাছে অনুভূত হয়ে বিস্ময় উৎপাদন করেন (৫৪) সচিদানন্দসান্দ্রাঙ্গ - চিন্ময় আনন্দঘন মূর্তি সর্বদেশে সর্বকালে স্বপ্রকাশ এবং নিরুপাধি প্রেমভাজন (৫৫) সর্বসিদ্ধিনিষেবিত - যাবতীয় সিদ্ধিকে স্বীয় বশীভূত করেছেন (৫৬) অবিচিন্ত্য মহাশক্তি - দিব্য স্বর্গাদির কর্তৃত্ব, ব্রহ্মা রুদ্রাদির মোহ এবং ভক্তগণের প্রারাব্ধখন্ডন শক্তি (৫৭) কোটি-ব্রহ্মাণ্ড বিগ্রহ - সর্বব্রহ্মান্ড ও সর্ব বৈকুন্ঠব্যাপিব্যাপী অবস্থান করছেন (৫৮) অবতারাবলীবীজ - সমস্ত অবতার সমূহের বীজ বা মূল উৎস (৫৯) হতারিগতিদায়ক - শত্রুদের নিহত করে মুক্তি প্রদান করেন (৬০) আত্মারামগণাকর্ষী - মহান জ্ঞানী ও পূর্ণ পরমহংসদের আকর্ষণ করেন (৬১) লীলামাধুর্য - রাসাদি বিস্ময়কর লীলা (৬২) প্রেমমাধুর্য - সর্বদা প্রেমময় প্রিয়জনগণ কর্তৃক পরিবেষ্টিত থাকেন (৬৩) বেণুমাধুর্য - ব্রহ্মাণ্ড বিমোহিনী বংশী বাদন করেন (৬৪) রূপমাধুর্য - অদ্বিতীয় রুপমহিমা।
সুতরাং ভগবান শব্দের প্রকৃত অর্থ হল এই চৌষট্টিটি পরমগুণ যার মধ্যে বিরাজমান তিনিই হলেন ভগবান।
এই গুণাবলীর মধ্যে লীলামাধুরী, প্রেমমাধুরী,বেণু মাধুরী ও রূপমাধুরী একমাত্র শ্রীকৃষ্ণের মধ্যেই সম্পূর্ণ বিদ্যমান।
সমস্ত বৈদিক শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবান বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কোন শাস্ত্রে কোন দেবদেবী পর্যন্ত নিজেদেরকে ভগবান বলে জাহির করেননি বরং সকলেই শ্রীকৃষ্ণের পরমেশ্বরত্ত্ব স্বীকার করে সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের পালন কর্তাগণ সর্বতীর্থের তীর্থস্বরূপ শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্মের রজকণা মস্তকে ধারণ করেন এবং ব্রম্ভা, শিব, অনন্ত, লক্ষ্মী - সকলেই তার অংশ এবং অংশকলারূপে তার পদরজ মস্তকে ধারণ করেন। (শ্রীমদ্ভাগবত ১০/৬৮/৩৭)।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সমস্ত ঈশ্বরের ঈশ্বর অর্থাৎ পরম ঈশ্বর।তাই পরম ঈশ্বরের কোন সৃষ্টিকর্তা নেই।যিনি পরম তার উপরে কেউ থাকেনা।যদি থাকতেন তবে পরম ঈশ্বর কথাটি ব্যবহার করা হতো না। শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণকে 'অসমোর্ধ্ব' বলে বর্ণনা করা হয়েছে। 'অসমোর্ধ্ব' কথাটির অর্থ হল যার সমান কেউ নেই এবং যার উর্দ্ধে কেউ নেই। তিনিই পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।
সৃষ্টির আদি জীব প্রজাপতি ব্রহ্মা শ্রীকৃষ্ণ সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করেছেন -
ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ অনাদিরাদির্গোবিন্দঃ সর্বকারণকারণম্।।
অর্থাৎ "সচ্চিদানন্দময় শ্রীকৃষ্ণই পরমেশ্বর ভগবান। তিনি অনাদিরও আদি এবং সমস্ত কারণের পরম কারণ।" ( ব্রহ্মসংহিতা ১ )
শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং স্বীকার করেছেন, "আমি সমস্ত জড় এবং চেতন বিশ্বের সব কিছুর উৎস। সবকিছুই আমার থেকে প্রবর্তিত।"
অহং সর্বস্য প্রভবো মত্তঃ সর্বং প্রবর্ততে ( গীতা ১০/৮)
শ্রীকৃষ্ণ আরো বলেছেন, " হে ধনঞ্জয় আমার উর্ধ্বে কিঞ্চিৎ বস্তুও নেই। আমিই পরমতত্ত্ব।"
মত্তঃ পরতরং নান্যৎ কিঞ্চিদস্তি ধনঞ্জয় (গীতা ৭/৭)
এইভাবে সমস্ত বৈদিক শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবান বলে প্রমাণ করা হয়েছে।
বেদে কি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা আছে?
'বেদ' কথাটির অর্থ হচ্ছে জ্ঞান। সৃষ্টির আদিতে প্রজাপতি ব্রহ্মা সেই জ্ঞান প্রাপ্ত হন শ্রীকৃষ্ণের কাছ থেকে। অথর্ব বেদে সেই কথাই বলা হয়েছে -
যৌ ব্রহ্মাণং বিদধাতি পূর্বং যো বৈ বেদাংশ্চ গাপয়তি স্ম কৃষ্ণঃ।
অর্থাৎ - " ব্রহ্মা যিনি পূর্বকালে জগতে বৈদিক জ্ঞান প্রদান করেন, সেই জ্ঞান তিনি সৃষ্টির আদিতে যার কাছ থেকে প্রাপ্ত হন তিনি হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ।"
মহর্ষি ব্যাসদেব শ্রীমদভগবত গীতার পুরুষোত্তম যোগ অধ্যায়ে (১৫/১৫) ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উক্তি বিবৃত করেছেন -
বেদৈশ্চ সর্বৈঃ অহমেব বেদ্যো
বেদান্তকৃদ্ বেদবিদেব চাহম্।।
"আমিই সমস্ত বেদের জ্ঞাতব্য বিষয়, আমি সমস্ত বেদান্ত কর্তা ও বেদবেত্তা।"
এইরকম ভুরিভুরি শাস্ত্র বাক্যের মাধ্যমে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে পরম ঈশ্বর রুপে বেদে উল্লেখ থাকলেও বর্তমান কলিযুগের দুর্বুদ্ধি ও হীন বুদ্ধি মানুষেরা পরম নিয়ন্তা পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণকে ভগবান না বলে নাকি 'জীবই ভগবান, মানুষই ভগবান, বৈজ্ঞানিকই ভগবান,শিব,কালী,দুর্গা ভগবান, নিরাকার ব্রহ্মই ভগবান,অমুক ভগবান,তমুক যোগী ভগবান, আমি ভগবান - এইভাবে অসংখ্য মনগড়া গাদাগাদা ভগবানকে আবিষ্কার করে চলেছে।এগুলো সবই আমাদের ভ্রান্ত ধারনা।
সত্যি কথা বলতে কি, নরকের মত পথ ধরবার জন্যে গন্ডমুর্খরা,জীব আর ঈশ্বর এক বলেই চিন্তা করে, এছাড়া আর কোন ঈশ্বরের অস্তিত্ব তারা অস্বীকার করে।
শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী তার বিশ্ব বিখ্যাত গ্রন্থ শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে উল্লেখ করেছেন-
যেই মূঢ় কহে, - জীব ঈশ্বর হয় 'সম'
সেইত 'পাষন্ডী' হয়,দন্ডে তারে যম।।
যে ব্যক্তি বলে যে জীব এবং ঈশ্বর সমান,সে একটি পাষন্ডী, তাই মৃত্যুর দেবতা শ্রী যমরাজ তাকে শাস্তি প্রদান করেন।"
ভগবান কোথায় থাকেন?
এই অনন্ত কোটি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা শ্রীশ্রী ব্রহ্মসংহিতায় বর্ণনা করেছেন -
গোলক নাম্নি নিজধাম্নি তলে চ তস্য
দেবী মহেশ-হরি-ধামসু তেষু তেষু।
তে তে প্রভাবনিচয়া বিহিতাশ্চ যেন
গোবিন্দম্ আদিপুরুষম্ তমহং ভজামি।।
অর্থাৎ "এই দেবীর ধাম তার উপরে মহেশ ধাম, তার উপরে হরিধাম বা বৈকুণ্ঠ এবং সবার উপরে শ্রীগোলকধাম অর্থাৎ স্বয়ং ভগবানের পরম ধাম। এই সকল প্রকার ধামে সেই সেই ধামে সেই সেই প্রভাব যিনি বিধান করেছেন সেই পরমেশ্বর ভগবান আদিপুরুষ শ্রীগোবিন্দকে আমি ভজনা করি।"
এখন এত প্রকার ধামে কোথায় কে থাকেন যদি নির্দেশ করা যায় তাহলে ভগবানের গোলকধামের অবস্থানটা নির্ণয় করা যেতে পারে। দেবীধাম বলতে অনন্তকোটি জড় বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে বোঝায়। তা শ্রীকৃষ্ণের বহিরঙ্গ শক্তি মহামায়া দুর্গা দেবী পরিচালনা করেন।পাতাল লোক থেকে ব্রহ্মলোক পর্যন্ত সমগ্র দেবীধামটাই জন্ম-মৃত্যু -জরা-ব্যাধির চক্রে, অর্থাৎ তা নিত্য নয়। এই ব্রম্ভান্ডের সংখ্যা অগনিত,ঠিক যেন এক গাড়ি সরিষা বীজের মতো, যার মধ্যে এই ধরাধাম হলো একটি ছোট্ট সরিষার দানার মতো।এই সমস্ত ব্রম্ভান্ডের উপরে রয়েছে চিন্ময় আকাশ। তার মধ্যে রয়েছে মহেশ ধাম বা শিবলোক। তার উর্ধে হরিধাম - ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বিস্তার শ্রীবিষ্ণুর বৈকুণ্ঠধাম।সবার ঊর্ধ্বে শুদ্ধ ভক্ত গনের পরম আদরণীয় দ্বিভূজ মুরলীধর শ্যামসুন্দর শ্রীকৃষ্ণের পরমধাম শ্রীগোলক বৃন্দাবন।
ভগবান সর্বব্যাপী,সর্বাশ্রয়,তাকে আশ্রয় করে অনন্ত বৈকুণ্ঠ ও অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড বিরাজমান, অতএব এরূপ যিনি তিনি কাকে ছেড়ে কোথায় যাবেন? ভগবান সর্বান্তযামী, তিনি সবার হৃদয়ে বিরাজমান।তিনি বলেছেন -
সর্বস্য চাহং হৃদি সন্নিবিষ্ট মত্তঃ স্মৃতি র্জ্ঞানমপোহনঞ্চ।
"আমি সবার হৃদয়ে রয়েছি, আমিই জীবের বাসনা অনুসারে স্মৃতি জ্ঞান দান করি আবার স্মৃতি জ্ঞান হরণ করি।" (গীতা ১৫/১৫)
ব্রহ্ম, ব্রহ্মা ও ভগবানের মধ্যে পার্থক্য কি?
ব্রহ্ম হচ্ছে ভগবানের অঙ্গজ্যোতি, ব্রহ্মা হচ্ছেন ভগবানের গুণাবতার বিশেষ এবং ভগবান হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ।
কৃষ্ণ ও নারায়ণের এর মধ্যে তফাৎ কি? কে বড়?
কৃষ্ণ ও নারায়ণ মূলত একই তত্ত্ব হলেও, গুণবৈশিষ্ট্য অনুসারে নারায়ণ অপেক্ষা কৃষ্ণের মধ্যে অধিক উৎকর্ষ দেখা যায়।পরম বৈষ্ণব-প্রবর ষড় গোস্বামীর অন্যতম শ্রীল রূপ গোস্বামীপাদ শ্রীভক্তিরসামৃতসিন্ধু গ্রন্থে খুব সুন্দর ভাবে ৬৪ প্রকারের গুণের কথা উল্লেখ করেছেন। সেগুলোর মধ্যে পঞ্চাশটি গুণ সাধারণত জীবের মধ্যেও অতি বিন্দু বিন্দু পরিমান থাকতে পারে।ব্রহ্মা,শিব প্রমুখ শ্রেষ্ঠ দেবতাদের মধ্যে অধিক পরিমাণে সেই পঞ্চাশটি গুণ বিদ্যমান। নারায়ণ এবং কৃষ্ণের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে সেই পঞ্চাশটি সহ আরও দশটি গুণ রয়েছে। নারায়ণের ৬০ টি গুণ পূর্ণ।কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের মধ্যে অতিরিক্ত চারটি গুণ রয়েছে যা নারায়ণের মধ্যে নেই।অর্থাৎ ৬৪টি গুণ একমাত্র শ্রীকৃষ্ণের মধ্যেই রয়েছে। এর থেকে বোঝা যায় নারায়ণ অপেক্ষা গুণবৈশিষ্ট্য শ্রী কৃষ্ণই বড়।
0 মন্তব্যসমূহ